ভোলায় পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষ, নিহত ১

পুলিশ বলছে, আত্মরক্ষার্থে বাধ্য হয়ে তারা লাঠিপেটা ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ শেষে গুলি চালায়। এতে একজন মারাও যায়।

ভোলা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2022, 09:44 AM
Updated : 31 July 2022, 09:44 AM

ভোলায় পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে এক ব্যক্তি নিহত ও অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন।

রোববার দুপুরে জেলা সদরের মহাজনপট্টিতে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে ভোলা সদর মডেল থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান।

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।”

নিহত আবদুর রহীম স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী বলে বিএনপি নেতারা জানান।

বিএনপির অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে আবদুর রহীম নিহত হয়েছেন।

এদিকে, পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে স্বীকার করলেও রহীমের মৃত্যু ইটের আঘাতে হয় বলে পুলিশ সুপারের ভাষ্য।

বিদ্যুতের লোডশেডিং ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে রোববার দুপুরে ভোলা জেলা বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় ১১ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ঘটনার পর বিএনপি ও পুলিশ পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে।

দুপুরে শহরের মহাজনপট্টিতে নিজ বাসভবনে জেলা বিএনপি সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিবরণ দেন।

তিনি ভোলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশ’ অশান্ত করার অভিযোগ করেন পুলিশের বিরুদ্ধে।

গোলাম নবী আলমগীর বলেন, তেল গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা রোববার সকালে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন।

শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করতে গেলে বিএনপি অফিসের সামনেই রাস্তার উপর পুলিশ বাধা সৃষ্টি করে এবং পুলিশ বিনা কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে বলে অভিযোগ করেন গোলাম নবী আলমগীর।

তিনি অভিযোগ করেন, “এক পর্যায়ে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গুলি, টিআর সেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহীম মারা যায়। হামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রদলের সভাপতিসহ শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে।”

আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে বরিশাল ও ঢাকায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেন জানান তিনি।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি চায় না। পুলিশ নিজেরাই পরিস্থিতি ঘোলা করছে।”

তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন এবং দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি চান।

গোলাম নবী জানান, সংঘর্ষে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ ট্রুম্যান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোপান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আল আমিন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. নুরে আলম, মো. লিটন, মো. হারুন, মো. সেন্টু, মো. সালাহউদ্দিন, মো. আল আমিন, মো. রাজিব, মো. মহসিন, আকতার, লিটন, রাকিব, নিকসন, জিএম সানাউল্লাহ, রাসেল, ওহিদসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন।

আহতদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধ বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।

বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারেফ হোসেন বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে মোশারেফ হোসেন বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে নির্মম আচরণের জন্য আগামী দিনে আন্দোলনের মধ্যে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

“শুধু ভোলা নয়, সারাদেশেই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। অথচ পুলিশ ভোলায় পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ফেলেছে। আমরা এখন ভোলায় নিরাপত্তহীনতায় আছি।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জেলা জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ ট্রুম্যান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোপান, সদর উপজেলা সদস্য সচিব মো. হেলাল উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আল আমিনসহ জেলা নেতৃবৃন্দ।

ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরহাদ সরদার বলেন, সমাবেশ শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু সমাবেশ শেষে মিছিল করতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে পড়েন। পুলিশের উপর হামলা করে।

“পুলিশ আত্মরক্ষার্থে বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ শেষে গুলি চালায়। এতে ১০ জন পুলিশ এবং বিএনপির কিছু নেতাকর্মী আহত হয়। একজন মারাও যায়।”

পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে ভোলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিএনপি সভাপতির বাড়িসহ মহাজনপট্টি ও কালিনাথ বাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ভোলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাফিজা তাসলিম ঐশি বলেন, “আমাদের এখানে যেসব রোগী ভর্তি হয়েছে তাদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। এদের মধ্যে আবদুর রহিম নামে একজন মারা গেছেন। আরও কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদের বরিশালে পাঠানো হয়েছে।”

এদিকে বিকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ বিএনপির সমাবেশে সহযোগিতা করেছে। মিছিলের অনুমতি না থাকায় পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের উপর গুলি ছোড়া হয়। গুলিতে একজন কনস্টেবল গুরুতর আহত হয়। এ ছাড়া আরও ১০ জন পুলিশ সদস্য হামলায় আহত হয়।

ইটের আঘাতে আবদুর রহীম মারা গেছেন বলে পুলিশ সুপারের দাবি।