এর মধ্যে রংপুরে দুটি এবং মাদারীপুর ও গাজীপুরে একটি করে মামলা হয়েছে।
Published : 26 Aug 2024, 10:18 PM
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশের তিন জেলায় হত্যাসহ আরো চারটি মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে রংপুরে আদালতে দুটি এবং মাদারীপুর ও গাজীপুরে একটি করে মামলা হয়েছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রংপুরে ফুল বিক্রেতা মেরাজুলকে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী নাজমীম ইসলাম। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ৩০ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রোববার বিকালে মহানগর হাকিম আমলী আদালতে মামলার আবেদন করেন নাজমীম ইসলাম।
একই ঘটনায় গত ১৮ অগাস্ট একই আদালতে হত্যা মামলা করেন নিহত মেরাজুল ইসলামের মা আম্বিয়া খাতুন।
বাদীর আইনজীবী শহিদুল বলেন, সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে দুটি মামলা সমন্বয় করে ৩০ অগাস্টের মধ্যে নথিভুক্ত করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক রাজু আহমেদ রাজু ।
নিহতের স্ত্রীর করা মামলার নথি থেকে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর সিটি করপোরেশন সামনে ফুটওভার ব্রিজের নিচে গুলিবিদ্ধ হন কলার দোকানের কর্মচারী মেরাজুল ইসলাম। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাজমীম ইসলাম মামলার আসামি হিসেবে শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করেন।
এর আগে রোববার দুপুরে একই আদালতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘর্ষে আহত মমদেল হোসেন (২৮) নামে এক দোকান কর্মচারী বাদী হয়ে মামলা করেন।
মামলায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাসহ ৭৫১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী পলাশ কান্তি নাগ বলেন, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় সিটি বাজার এলাকায় পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষ চলার সময় পুলিশের গুলিতে বাদী মমদেল হোসেনের বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ গুঁড়ো হয়ে যায়। এছাড়া তার হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। পরে তাকে রংপুর থেকে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ ও হাতের আঙুল কেটে ফেলা হয়। ওইদিন ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান চারজন।
শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের নির্দেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ তাণ্ডব চালিয়েছেন বলে মামলার আবেদনে বলা হয়।
এদিকে, মাদারীপুরে তাওহীদ হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, বাহাউদ্দিন নাছিম ও লিটন চৌধুরীসহ ৯২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
রোববার রাতে জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব কামরুল হাসান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলে সোমবার সকালে জানান মাদারীপুর জেলার পুলিশ সুপার শফিউর রহমান।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই মাদারীপুর পৌর শহরের যুব উন্নয়ন অফিসের সামনে আন্দোলনে যোগ দেন সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের সালাহউদ্দিন সন্নামাতের ছেলে তাওহীদ সন্নামত। এ সময় ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়।
পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুলিতে নিহত হন তাওহীদ। পরে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসিবুর রহমান খান, হাফিজুর রহমান যাচ্চু খানসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন আরও ৫০০ থেকে ৭০০ জন।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি এএইচ সালাউদ্দিন বলেন, মামলার বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন।
এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ছাড়া গাজীপুর মহানগরীর গাছা এলাকায় মো. মঞ্জু মিয়া নামে এক রাজমিস্ত্রী নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা হয়েছে।
শনিবার রাতে নিহতের বাবা, রংপুর জেলার পীরগাছা থানার জুয়ান এলাকার বাসিন্দা মো. ইনছার আলী (৬৮) বাদী হয়ে গাছা থানায় মামলাটি করেন বলে ওসি মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম জানান।
নিহত মো. মঞ্জু মিয়া (৪৩) পরিবারের সঙ্গে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন বড়বাড়ী এলাকায় জয়বাংলা রোডে মোয়াজ্জেম সরকারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, পেশায় রাজমিস্ত্রী মঞ্জু মিয়া ২০ জুলাই ছাত্র-জনতার সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাছা থানাধীন বড়বাড়ী বাজারের সামনের রাস্তায় আসেন।
তখন আসামিদের নির্দেশে বন্দুক, পিস্তল, লাঠি, লোহার রড, রামদা, ছেন, চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানো হয়। মারপিট করে মঞ্জু মিয়াসহ ২৫-৩০ জন আন্দোলনকারীকে জখম করা হয়।
এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতা মো. আজমত উল্লাহ খান ও সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল সশরীরে সেখানে যান। তাদের হুকুমে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অবৈধ পিস্তল দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করেন। তখন মঞ্জু মিয়ার পেটের বাম পাশে গুলি ঢুকে পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
খবর পেয়ে স্ত্রী মোসা. রহিমা বেগম (৩১) ছাত্র-জনতার সহায়তায় মঞ্জু মিয়াকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মঞ্জুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ঘটনার দিন বিকালে মঞ্জু মিয়া মারা যান।