“পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”
Published : 25 Jul 2024, 11:22 AM
কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা থামাতে জারি করা কারফিউর ছয় দিনে পদ্মা সেতু দিয়ে ৪৪ হাজার ২৭৬টি যানবাহন চলাচল করেছে। এ সময় টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৩৫০ টাকা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী জানান, গত দুই বছরে পদ্মা সেতু দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১৯ হাজার ১৬৮টি গাড়ি পারাপার হয়েছে। এ সময় এক দিনেই টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ ১৪ হাজার ২২ টাকা।
সেই হিসেবে ছয়দিনে টোল আদায় হওয়ার কথা ১৩ কোটি ৯২ লাখ ৮৪ হাজার ১৩২ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৩৫০ টাকা। ফলে রাজস্ব কম আদায় হয়েছে ৯ কোটি ১১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮২ টাকা।
আমিরুল বলেন, “১৯ জুলাই কারফিউর প্রথম দিনে ৭ হাজার ৯৭০টি যান পারাপারে ৮১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫০ টাকা টোল আদায় হয়। আগের দিন অর্থাৎ ১৮ জুলাই পদ্মা সেতু দিয়ে ১০ হাজার ৪৬টি যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয়েছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ৯ হাজার ৫৫০ টাকা।
“কারফিউর দ্বিতীয় দিনে আদায় হয়েছে ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা; এদিন ৪ হাজার ৪৪৪টি গাড়ি পারাপার হয়েছে। তৃতীয় দিন অর্থাৎ ২১ জুলাই ৪ হাজার ৭০৬টি যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয় ৪৬ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫০ টাকা। এটাই সেতুতে সর্ব নিম্ন টোল আদায়।”
এছাড়া কারফিউর চতুর্থ দিন ৬ হাজার ৫৯২টি গাড়ি পারাপারে ৬৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা এবং পঞ্চম দিন ৮ হাজার ২৪৬টি গাড়ি পারাপারে ৯০ লাখ ৯৯ হাজার ১০০ টাকা টোল ওঠে বলে জানান বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক।
ষষ্ঠ দিন বুধবার ১২ হাজার ৩১৮টি পারাপার হয় পদ্মা সেতু দিয়ে। তাতে টোল আসে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৫০ টাকা। কারফিউর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ও খাবারের ট্রাকসহ জরুরি যান চলাচল করছে। এছাড়া কারফিউর শিথিল সময়েও অন্য কিছু গাড়ি পারাপার হয় বলেও জানান তিনি।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার মধ্যে ১৭ জুলাই আন্দোলনকারীরা সেতুর মুখে মাওয়া পয়েন্টে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চালানোর পর সর্বোচ্চ সর্তকতায় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন শুক্রবার সেতুতে মোতায়েন করা হয় বিজিবি। আর শনিবার থেকে সেতুর নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী।
আমিরুল হায়দার বলেছেন, “সেতুর নিরাপত্তায় সেতুর কাছেই স্থাপন করা হয়েছে ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’। সেনানিবাস তথা পূর্ণাঙ্গ ক্যান্টনমেন্ট রয়েছে জাজিরায়। মাওয়া প্রান্তেও রয়েছে শেখ রাসেল সেনানিবাসের একটা অংশ।
“সেতুর স্থল ভাগ ছাড়াও নৌপথেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ফলে সেতুর জলে-স্থলে সবখানেই সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী।”
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন বলেন, “সেতুতে যান চলাচলে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক মিনিটের জন্যও বন্ধ হয়নি, সার্বক্ষণিক সেতু দিয়ে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।”
কারফিউ ভঙ্গ করায় বুধবার ২৬ মামলায় ১৫ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এই অর্থদণ্ডের টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হয়। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে মৌখিকভাবে সর্তক করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি; পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে।”
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুজাফর রিপন। বিকাল ৫টা পর থেকে আবারও কারফিউ বলবৎ হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করা হয়। তাছাড়া মুন্সীগঞ্জ শহর, টঙ্গীবাড়ি, লৌহজং, শ্রীনগর, সিরাজদিখান ও গজারিয়া উপজেলায় সেনাবাহিনীর টহল চলছে।
এছাড়া সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে, পদ্মা সেতু ছাড়াও ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে । বিজিবিও মোতায়েন রয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে।
পাশাপাশি পুলিশ ও আনসার বাহিনীও বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে জেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করছে।