ভাঙনের কারণে বন্ধ রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের সাবমেরিন ক্যাবলের সঞ্চালন লাইনও।
Published : 30 Aug 2023, 11:40 PM
টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলের কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের সাত শতাধিক পরিবার।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাফিউল আলম।
এদিকে, ভাঙনের কারণে বন্ধ রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের সাবমেরিন ক্যাবলের সঞ্চালন লাইন; এটি চালু রাখতে নদীতে ছয় থেকে সাত হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হবে বলে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান।
ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত উপজেলার অষ্টমীর চর, চিলমারী ও নয়ারহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যায় নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। নদী পাড়ের বাসিন্দারা গরু, ছাগল, হাঁসমুরগি অল্পমূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
ঘরবাড়ি থেকে আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার আগেই বাড়িভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অনেকের। পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিলেও শিশু ও নারীদের নিয়ে বিড়ম্বনা পোহাতে দেখা গেছে।
অনেককে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে দেখা গেছে। তবে ভিটেমাটি হারানো বেশিরভাগ পরিবার এখনো মাথা গোঁজার স্থায়ী কোনো জায়গা পাননি। সব মিলিয়ে নদী পাড়ের কৃষিজীবী ও দিনমজুররা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, গত ২ মাসে তার ইউনিয়নের বজরা দিয়ার খাতা, উত্তর খাউরিয়ার চর, দক্ষিণ খাউরিয়ার চর, বাতাশী কাজল ডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার ৫৩৫টি পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
অষ্টমীর চর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নে ৬৫টি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সুমন বলেন, “শাখাহাতী, বৈলমনদিয়ার খাতা, চড়ুয়াপাড়া, তেলিপাড়া ও গাজীরপাড়াসহ পুরো ইউনিয়ন ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে। নদীতে বসতভিটা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রায় ১১০টি পরিবার।”
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বর্তমানে নদী তীরে পাটের শোলা ও টিন দিয়ে ছাপরা ঘর উঠিয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে তিনি জানান।
সরকারি আবাসনে আশ্রয় নেওয়া সদ্য ভাঙনের শিকার শাখাহাতী চরের নুরুল হক বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে তার ভিটে মাটি নদের পেটে চলে গেছে। কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে আবাসনের ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
একই এলাকার বাসিন্দা মল্লিক খাতুন জানান, কয়েকদিনের মাথায় তার বাড়িটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে গেছেন। বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে আছেন।
নদী ভাঙন বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেণ নেওয়ার দাবি তার।
ইউএনও রাফিউল আলম বলেন, “বুধবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর যারা গৃহহীন হয়েছেন তাদের পুনর্বাসনের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: