সকাল ৬টার দিকে উপাচার্যের আশ্বাসে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে প্রায় ১৯ ঘণ্টা অনশনের পর কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন ১৪ শিক্ষার্থী।
Published : 03 Feb 2025, 11:54 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবিতে আবারও আমৃত্যু অনশনে বসেছেন বিভিন্ন বিভাগের আট শিক্ষার্থী।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে অনশনে বসেন তারা।
এর আগে সকাল ৬টার দিকে উপাচার্যের আশ্বাসে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে প্রায় ১৯ ঘণ্টা অনশনের পর কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন ১৪ শিক্ষার্থী।
পুনরায় অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন রাহাত, অর্থনীতি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী নকিব আল মাহমুদ অর্ণব, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুয়িদ মুহম্মদ ফাহিম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান লিমন, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মালিহা নামলাহ, আইবিএ ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারহানা বিনতে জিগার ফারিনা, ইংরেজি বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী চিশতি এবং বাংলা বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুহাম্মাদ মাহাদী।
অনশনরত শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম লিমন বলেন, “গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা সব ধরনের কোটা-বৈষম্য বাদ দেওয়ার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকালকে (রোববার) আমরা গণঅনশনে বসি। প্রায় ১৯ ঘণ্টা অনশন করার সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে সারারাত অবস্থান করে। তখন আমরা মানবিকভাবে তাদের কথায় আশ্বস্ত হই এবং জানায় যে, নীতিগতভাবে প্রশাসন আমাদের দাবির সঙ্গে একমত।
“তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের অনশন কর্মসূচি স্থগিত করি এবং প্রশাসনকে আজকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সময় দেই তাদের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য। কিন্তু বিকালে তারা যে সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য নিয়ে আসল সেটা আমাদের এই অনশন কর্মসূচির সঙ্গে প্রহসনমূলক।”
পুনরায় অনশনে বসার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাবি শাখার সদস্যসচিব তৌহিদ সিয়াম বলেন, “প্রশাসন আজকে সকালে আমাদের যে আশ্বাস দিয়ে অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছিল, তার ভিত্তিতে আমরা ভেবেছিলাম বিকালের মিটিংয়ে তারা আমাদের পক্ষে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে আসবে। কিন্তু তারা সম্পূর্ণ গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে। এই প্রশাসন পুরো বিষয়ে কালক্ষেপণের জন্য আমাদের সামনে ১৯৭৩ এর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের একটি মূলা ঝুলিয়েছে, যেটা আসলে ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সঠিক না। প্রশাসন বলছে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি চাইলে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, তারা পোষ্য কোটা রাখবে কি-না।
“বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের কাছে ১৫ কার্যদিবস সময় চেয়েছে। কিন্তু আমরা সেটা প্রত্যাখান করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের জন্য অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিল করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পূর্বঘোষিত অনশন কর্মসূচি চলবে।”
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পোষ্য কোটা বিষয়ক বিকালের সভা শেষে যখন সমস্যা সমাধানের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটির কথা জানায় তৎক্ষণাৎ শিক্ষার্থীরা সেটা প্রত্যাখ্যান করে। পরে সন্ধ্যা থেকে আবার অনশন শুরু হয়।
পোষ্য কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। সদস্য উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রব, সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন খান। এ ছাড়া কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এ বি এম আজিজুর রহমান। কমিটিকে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলা হয়েছে।
সামগ্রিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে।”
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নতুন কমিটি রিপোর্ট না দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা সরাসরিভাবে কোনো কিছু ডিক্লেয়ার করতে পারি না।”
এদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন অনশনরতরা।