রোববার শিশু পার্কসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্মারক মঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালটির কিছু অংশে থাকা তিনটি ছবি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
Published : 01 Apr 2025, 10:30 PM
লালমনিরহাটে স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল ভাঙার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি। তারা জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করেছে।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় শহরের মিশন মোড় চত্বরে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিবি লালমনিরহাট জেলা কমিটির সভাপতি ময়জুল ইসলাম ময়েজের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক রফিকুল ইসলাম অপু, জেলা কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন কুমার সিংহ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মধুসূদন রায়, যুবনেতা গোপাল চন্দ্র রায়, বদিউজ্জামান সোহাগ, ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম শিহাব।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ঐক্য ন্যাপ কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল মোনায়েম নেহেরু বক্তব্য দেন।
বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাঙার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের অপসারণ এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭২ সালের সংবিধান ও জাতীয় পতাকার প্রশ্নে কোনো আপোষ নেই। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলবে।
তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি কিংবা মুছে ফেলার যেকোনো প্রচেষ্টা জনগণ রুখে দেবে।
লালমনিরহাট শহরের বিডিআর রোডে শিশু পার্কসংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্মারক মঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালটির কিছু অংশে থাকা তিনটি ছবি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়েছে। রোববার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শ্রমিকরা ম্যুরালটি ভাঙার কাজ করেছে।
আরও পড়ুন-
লালমনিরহাটে 'ঢেকে রাখা' মুক্তিযুদ্ধের সেই ম্যুরাল ভাঙল প্রশাসন
লালমনিরহাটে বাধায় এনসিপির সংবাদ সম্মেলন পণ্ডের অভিযোগ, ছাত্রদলের
'জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায়' ঢেকে দেওয়া
এর আগে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসেও ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। তখনও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষেরা এর প্রতিবাদ করেছিলেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ মার্চ জেলা প্রশাসক এক বক্তব্যে বলেছিলেন, “২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এ কারণে ম্যুরালটি ঢেকে দেওয়া হয়েছে।”
এরপর শনিবার লালমনিরহাট জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব মো. হামিদুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে ম্যুরাল অপসারণ করতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, “৫ অগাস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থেকে লালমনিরহাটের ফ্যাসিজমের সব চিহ্ন মুছে ফেলা হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক মঞ্চের বিতর্কিত ম্যুরালটি রয়ে যায়। যে ম্যুরালটি স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বহন করে না। তাই স্বৈরাচারের সব চিহ্ন ও ম্যুরাল অপসারণ ছাত্র-জনতার দাবি ও গণ-আকাঙ্ক্ষা।”
লালমনিরহাট জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০১৪ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক মঞ্চের ম্যুরাল নির্মিত হয়। ম্যুরালটিতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবনগর সরকার, ৭১-এর গণহত্যা, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণসহ জাতির গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা চিত্রিত ছিল।