Published : 30 Apr 2025, 02:17 PM
গতবছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর হস্তান্তর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঘর হস্তান্তর করেন।
তিনি বলেন, “যারা বাড়ি পেয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন। দেশের মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে যে সাহস জুগিয়েছে সে সাহস সবসময় মনের মধ্যে ধারণ করবেন।”
২০২৪ সালের বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলা। অসংখ্য বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।
যেসব পরিবারের বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং যাদের ঘর নির্মাণের সামর্থ্য নেই– এরকম ৩০০ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনঃনির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রধানের পেশা, আয়, ঘর নির্মাণে আর্থিক অসামর্থ্য, দুঃস্থতা, ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ধরন ও স্থানীয় অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে উপকারভোগী পরিবার বাছাই করা হয়।
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসক মনোনীত প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যৌথ জরিপের মাধ্যমে উপকারভোগীদের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করা হয়।
৩০০ ঘরের মধ্যে ফেনী জেলায় ১১০টি, নোয়াখালী জেলায় ৯০টি, কুমিল্লা জেলায় ৭০টি ও চট্টগ্রাম জেলায় ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ঘরগুলো যেন দুর্যোগ সহনীয় ও টেকসই হয় সে লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহযোগিতায় দুটি ডিজাইন প্রস্তুত করে।
প্রতিটি ডিজাইনে দুটি মূল কক্ষসহ কমন স্পেস, টয়লেট, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। প্রথম ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৪৯২ বর্গফুট এবং প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা। দ্বিতীয় ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৫০০ বর্গফুট এবং প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা।
উপকারভোগীদের নিজের বসতভিটার স্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ঘর নির্মাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল থেকে প্রাথমিকভাবে পঞ্চাশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৩০০ ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই কাজে যারা নিরলস পরিশ্রম করে গৃহহীন পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে, বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের সদস্যগণ, এলজিইডির প্রকৌশলীগণ ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ, তাদের প্রত্যেককে আন্তরিক ধন্যবাদ।”
প্রকল্পের কাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি একটি ছোট প্রকল্প। তিনশ ঘর নির্মাণ, কিন্তু এর মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ করার যে দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করলাম তা আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।”
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ভবিষ্যতেও এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা পালন করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকবে।
তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় ২৯৮টি ঘর ইতোমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় দুটি ঘর নির্মাণ করা যায়নি, সেগুলো খুব শিগগিরই নির্মাণ হয়ে যাবে।
অন্যদের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলার চারজন উপকারভোগী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী।
কুমিল্লায় ঘর হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয় চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গোলপাশা ইউনিয়নের কুমাল্লা গ্রামে উপকারভোগী মো. আলম মিয়ার বাড়ি থেকে।
এ সময় জেলার বুড়িচংয়ে ২৯টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ১০টি, চৌদ্দগ্রামে ১০টি, মনোহরগঞ্জে ১০টি, সদর দক্ষিণে ৬টি, ও নাঙ্গলকোটে ৫টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করেন প্রধান উপদেষ্টা।
বন্যা দুর্গতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের হিসেবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো যে দায়িত্ব ছিল আমরা তা পালন করেছি।”
কুমিল্লা প্রান্তে বুড়িচং উপজেলার মিথিলাপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের হাতে নতুন ঘরের চাবি তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার।
এ সময় সেনাবাহিনীর ৪৪ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. এনামুল হক, ২৩ বীরের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।