পাসপোর্ট আইনে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে রোববার রাতে কানাইঘাট থানায় এই মামলা দায়ের করে।
Published : 26 Aug 2024, 08:54 PM
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে সিলেটে আরেকটি মামলা হয়েছে।
রোববার রাতে পাসপোর্ট আইনে ভারতে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা’র অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় এই মামলা দায়ের করে।
সোমবার সন্ধ্যায় কানাইঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে এ তথ্য দিয়েছেন।
শনিবার বিকাল ৪টার দিকে সিলেটের বিচারিক হাকিম আলমগীর হোসেন বিচারপতি মানিককে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. জমশেদ আলী বলেছেন।
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেছিলেন, তার চিকিৎসার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শিশির চক্রবর্ত্তীকে সভাপতি করে আট সদস্যেও মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টার সময় বিচারপতি মানিককে আটক করে বিজিবি।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইলাম সেদিন বলেছিলেন,শুক্রবার রাতে ‘ভারতে যাওয়ার প্রাক্কালে’ সীমান্তে বিজিবির হাতে তিনি আটক হন।
শনিবার বিকালে আদালতে তোলার সময় আলোচিত এই বিচারপতিকে লক্ষ্য করে উত্তেজিত জনতাকে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাবেক এ বিচারপতিকে আদালতে তোলার সময় সিঁড়িতে ওঠার আগে কয়েকজন যুবক কিল, ঘুষি ও পিছন থেকে টেনে ধরে আঘাত করেন। এ সময় তার কাপড়ে রক্তের দাগও দেখা গেছে।
তার ওপর হামলার বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে রয়েছে।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চৌধুরী মানিককের অণ্ডকোষে অস্ত্রোপচার হয় ওসমানী হাসপাতালে।
ক্ষমতার পালাবদলের ডামাডোলের মধ্যে কয়েকদিন প্রকাশ্যে ছিলেন না চৌধুরী মানিক।
আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে সোচ্চার এই সাবেক বিচারপতি বিভিন্ন সময়ে তার মন্তব্যের জন্য আলোচিত ছিলেন। গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তার কোনো খোঁজ মিলছিল না।
এরই মধ্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য করার’ অভিযোগে ঢাকা ও নোয়াখালীতে দুটি মামলা হয়েছে চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে আটকের পর তাকে বিজিবি ক্যাম্পে রাখা হয়।
১৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদুন নবী সাংবাদিকদের বলেন, "অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় দনা সীমান্ত থেকে আমরা আটক করেছি। উনাকে আইনি প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
অবৈধ অনুপ্রবেশের সেই অভিযোগে চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে এবার মামলাও হলো।
১৯৭৮ সালে হাই কোর্টের আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন জীবন শুরু করা চৌধুরী মানিক ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হন। ২০০১ সালে তাকে হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারক করে নেয় সরকার। কিন্তু পরে বিএনপি সরকার এসে তাকে বাদ দেয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর হাই কোর্টের একটি রায়ে বিচারকের আসনে ফেরেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ২০১৩ সালে তাকে পদোন্নতি দিয়ে আপিল বিভাগের বিচারক করা হয়।
২০১৫ সালে অবসরে যাওয়ার আগে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে বার বার শিরোনাম হয়েছেন বিচারপতি মানিক। সে সময় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছিলেন।
অবসরের পর তাকে নিয়মিত টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে দেখা যেত। বরাবরই তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য করার’ অভিযোগে গত কয়েক দিনে বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে যে দুটি মামলা হয়েছে, তার মধ্যে একটি করেছেন মো. জিয়াউল হক নামের এক আইনজীবী।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম সাইফুল ইসলামের আদালতে দায়ের করা ওই মামলায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেও আসামি করার পর তারা গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
‘মানহানির’ অভিযোগে বিবাদীদের কাছে ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন বাদী। বিচারক তার আর্জি শুনে অভিযোগ তদন্ত করে পিবিআইকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর চ্যানেল আইয়ের একে আলোচনা অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে’ আখ্যায়িত করেন। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি সেমিনারে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ‘মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না’। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে ‘অনুপ্রবেশকারী’।
এছাড়া জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ গত ১৯ অগাস্ট নোয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে আরেকটি মামলা করেন।
সেখানেও জিয়াউর রহমান সম্পর্কে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে সাবেক বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে।