চিকিৎসকরা বলছেন, বিষধর সাপ কামড়ালে সেই বিষ নিষ্ক্রিয় করতে অ্যান্টিভেনম দেওয়া জরুরি; সময়মতো অ্যান্টিভেনম দেওয়া না হলে মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হয়।
Published : 17 Aug 2023, 10:56 PM
জুন-জুলাই মাসে ফরিদপুর জেলার আলাদা স্থানে বিষাক্ত রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে প্রাণ হারান পাঁচজন। কাপে কাটার চিকিৎসা হিসেবে এদের কারও ভাগ্যেই অ্যান্টিভেনম জোটেনি।
কারণ জুন মাস থেকে জেলার কোনো হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ নেই। ফলে রাসেলস ভাইপারের মতো অতি বিষাক্ত সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগী এলেও অনেকটা ‘বিনা চিকিৎসা’তেই তাদের মৃত্যু হচ্ছে।
সবশেষ গত দুইদিনে ফরিদপুরের তিন উপজেলায় বিষাক্ত সাপের কামড়ে তিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন, ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর গ্রামের নুরজাহান (৫৫), আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের রুদ্রবানা গ্রামের নেপুর মোল্যার ছেলে ওয়াজ করুনী (২০) এবং বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ভাবখন্ড গ্রামে বর্ষন মহন্ত (১১)।
সাপে কাটার পর এদের তিনজনকেই ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সেখানে অ্যান্টিভেনম না থাকায় তা রোগীদের শরীরে প্রবেশ করানো যায়নি।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোরে আলফাডাঙ্গায় পাট কাটতে গিয়ে বিষাক্ত সাপের কামড়ে আহত হন কলেজছাত্র মো. ওয়াজ কুরুনী।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বাবার আলী জানান, প্রথমেই ওয়াজ কুরুনীকে আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, কিন্তু সেখানে কোনো অ্যান্টিভেনম না থানায় ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে সেখানেও মেলেনি অ্যান্টিভেনম। এ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখানে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে বুধবার দুপুরে বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ভাবখন্ড গ্রামে নিজেদের বাড়ির মাটির গর্তে পা গেলে বিষধর সাপ বর্ষণ মহন্তকে কামড় দেয়। একইভাবে তাকেও প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও অ্যান্টিভেনম দেওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে স্থানীয় শ্মশানে দাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
একইদিন সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর গ্রামের নুরজাহানকে বাড়ির পাশ থেকে খড় আনতে গিয়ে সাপে কামড় দেয়।
তার ভাই চুন্নু মোল্লা বলেন, “দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েও আমার বোনের চিকিৎসা করাতে পারিনি। ডাক্তাররা বলেছেন তাদের কাছে ওষুধ নেই।”
গত দু-তিন বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে রাজবাড়ী, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সাপের উপদ্রব বেড়েছে। বিশেষ করে অত্যন্ত বিষধর রাসেলস ভাইপারের দেখা মিলছে। এরা মূলত আসছে মধুমতি ও পদ্মার স্রোতে মিশে।
চিকিৎসকরা বলছেন, বিষধর সাপ কামড়ালে সেই বিষ নিষ্ক্রিয় করতে অ্যান্টিভেনম দেওয়া জরুরি। সময়মতো অ্যান্টিভেনম দেওয়া না হলে মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হয়।
ফরিদপুরে সাপে কাটা রোগীর পরিমাণ বাড়লেও অ্যান্টিভেনম সংকট কাটছে না কেন তা জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “আমাদের সংগ্রহে যতটুকু অ্যান্টিভেনম ছিল তা ব্যবহার হয়ে গেছে। আমরা চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি, আশা করছি দ্রুতই পেয়ে যাব।”
চাহিদা অনুযায়ী অ্যান্টিভেনম পেলে তা সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরবরাহ করা যাবে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারও জানালেন অ্যান্টিভেনমের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের কথা।
তিনি বলেন, “যেহেতু ফরিদপুর অঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব রয়েছে, তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যেই অ্যান্টিভেনম পেয়ে যাব।”
বর্ষা মৌসুমে অ্যান্টিভেনমের এ সংকট আরও প্রাণহানী বাড়াতে পারে বলে শঙ্কা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি শিপ্রা গোস্বামীর।
তিনি বলেন, “এই মৌসুম স্বাভাবিকভাবেই সারাদেশে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। এই সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনম সরবরাহ না করে তাহলে মৃত্যুর মিছিল লম্বা হবে।”
আরও পড়ুন: