মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার খবর জানিয়েছে পাউবো।
Published : 20 Aug 2024, 10:49 PM
তিন দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে ফেনীর মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
তৃতীয় দফার বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১৪ হাজার পরিবার। এ দুই উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল।
মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার খবর জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
ফেনী পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, ২ অগাস্টের বন্যায় মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলায় ২২টি ও ফুলগাজী উপজেলায় চারটি স্থান ভেঙে যায়।
তিন দিনের টানা বর্ষণে নদীর পানি বেড়ে ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে পরশুরাম উপজেলায় প্রায় ৪৫টি গ্রাম এবং ফুলগাজী উপজেলার ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার পরিবার।
চলতি বছরের ১ জুলাই প্রথম দফা ও ২ অগাস্ট দ্বিতীয় দফা মুহুরী-কুহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়। বর্ষা অব্যাহত থাকায় আগের ভেঙে যাওয়া স্থানগুলো মেরামত করা হয়নি। দুই থেকে তিন দিনের অতিবৃষ্টিতে ফের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, তৃতীয় দফা বন্যায় পরশুরাম পৌরসভার বাউরখুমা, বাউরপাথর, দুবলাচাদ, বিলোনিয়া, অনন্তপুর, বেড়াবাড়িয়া, কোলাপাড়া এবং মির্জানগর ইউনিয়নের মির্জানগর, কালী কৃষ্ণনগর, কাশিনগর, ছয়ঘরিয়া, দক্ষিণ কাউতলী, চম্পক নগর, পূর্ব সাহেব নগর, জঙ্গলঘোনা ও গদানগর গ্রাম, চিথলিয়া ইউনিয়নের চন্দনা, পালপাড়া, দক্ষিণ শালধর, উত্তর শালধর, কিসমত শালধর, মালীপাথর, পাগলীরকুল, কুন্ডেরপাড়, রাজষপুর, জংঙ্গলঘোনা, পশ্চিম অলকা, পূর্ব অলকা, নোয়াপুর, ধনীকুন্ডা, চিথলিয়া, রামপুর, দুর্গাপুর গ্রাম, বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের সাতকুচিয়া, চারিগ্রাম, টেটেশ্বর, বাঘমারা, জমিয়ার গাঁও, কহুয়া, তালবাড়ীয়া গ্রামসহ ৪৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এ উপজেলার প্রায় ৯ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে; দুর্যোগ মোকাবিলায় ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫০ টন চাল মজুদ আছে বলে জানান ইউএনও।
পরশুরামের দক্ষিণ শালধর গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, “দেড় মাসে ঘরবাড়ি তিনবার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি। এভাবে টানা বৃষ্টি হলে আরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে।”
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া জানান, ফুলগাজী ইউনিয়নের নিলক্ষী, গাবতলা, মনতলা, গোসাইপুর, শ্রীপুর, বাসুরা, দেড়পারা, উত্তর দৌলতপুর, মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বদরপুর, মান্দারপুর, করইয়া, কালিকাপুর, কামাল্লা, পৈথারা, জাম্মুরা, ফকিরের খিল, কমুয়া, বালুয়া, নোয়াপুর, চানপুর, দক্ষিণ তাড়ালিয়া, দক্ষিণ শ্রীপুর, কুতুবপুর এবং আমজাদহাট ইউনিয়নের তালবারিয়া, উত্তরধর্মপুর, দক্ষিণ ধর্মপুর, মনিপুর, ইসলামিয়া বাজার, বসন্তপুর, তারাকুচাসহ ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এ উপজেলায় প্রায় চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে; পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৮ টন চাল মজুদ রয়েছে বলে জানান ইউএনও।
ফুলগাজীর নোয়াপুর গ্রামের গোল নাহার বেগম বলেন, “বন্যায় রান্নাঘর ডুবে গেছে। সোমবার থেকে শুকনো খাবার খেয়ে আছি। কেউ খোঁজখবরও নেননি। সরকার পরিবর্তনের পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও আত্মগোপনে চলে গেছে। এখন আমাদের কে সহায়তা করবে?”
দৌলতপুর এলাকার কৃষক সরওয়ার জাহান বলেন, “জুলাইয়ের বন্যায় ধানের বীজতলা তলিয়ে যায়। নতুন করে বীজতলা তৈরি করে রোপণের কয়েকদিন পর ২ অগাস্ট আবারও পানিতে ডুবে যায়।
“দুই দিনের ভারি বৃষ্টিতে এখন নতুন করে সব জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। দেড় মাসের মধ্যে তিনবার বন্যায় হওয়া ক্ষতি কাটিয়ে উঠার সুযোগ নেই। এবার আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।”
ফেনী শহর ঘুরে দেখা গেছে, শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক, মিজান রোড, অ্যাকাডেমি রোড, শাহীন একাডেমি, রামপুর, তাকিয়া রোড, আবু বক্কর সড়ক, শাহীন অ্যাকাডেমি রোড, ফেনী বড় বাজারের বিভিন্ন গলি, বারাহীপুর এলাকার বিভিন্ন সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ী সড়ক, পাঠান বাড়ী রোডসহ বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।
এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে অটোরিকশায় পানি ঢুকে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারী ও বাসিন্দারা।
ফেনী পৌরসভার সচিব সৈয়দ আবুজর গিফরী বলেন, কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে সড়ক থেকে পানি নামতে সময় লাগছে। প্রতিদিন ৩০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী শহরের ড্রেন পরিষ্কার করছেন। পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে।