স্বজনদের অভিযোগ, নার্সকে অক্সিজেনের কথা বললে, ব্যস্ততা দেখিয়ে অন্য কাজে মনোযোগ দেন তিনি।
Published : 26 Feb 2024, 11:34 AM
মাদারীপুর সদর হাসপাতালে দায়িত্বরত নার্স ও ডাক্তারের অবহেলায় মেরুদণ্ডে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়া এক পান বিক্রেতা মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্বজনদের অভিযোগ, ডাক্তারের পরামর্শ মত ইনজেকশন দেওয়ার পর প্রচণ্ড ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ছটফট করতে থাকেন রোগী। এরপর দেড় ঘণ্টা ধরে স্বজনরা অক্সিজেনের জন্য আহাজারি করলেও ব্যস্ততার অজুহাতে তা দেননি দায়িত্বরত নার্স। একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রোগী।
ক্ষুব্ধ স্বজন ও জনপ্রতিনিধিরা অভিযুক্তদের বিচার দাবি করলে বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
মারা যাওয়া ৫৫ বছরের শ্যামল দাস মাদারীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আমিরাবাদ এলাকার রামজীবন দাসের ছেলে। তিনি শহরের পুরানবাজারে পান বিক্রি করতেন।
শ্যামল দাসের ছোটভাই শংকর দাস জানান, মেরুদণ্ডের ব্যথা নিয়ে রোববার বিকেলে ৫টার দিকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার ভাইকে। পরে হাসপাতালের নিচতলার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রিয়াদ মাহমুদ চিকিৎসাপত্র দিয়ে তাকে ভবনের ছয়তলায় ভর্তি দেন।
“ভর্তি হলে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখে রোগীকে ব্যথার ইনজেকশন পুশ করেন কর্তব্যরত নার্স সুজাতা। কিন্তু তাতে তার শ্বাসকষ্ট ও দাপাদাপি শুরু হয়। শরীরে ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন তিনি। এ সময় নার্সকে অক্সিজেনের কথা বললে, ব্যস্ততা দেখিয়ে অন্য কাজে মনোযোগ দেন তিনি।”
প্রায় দেড়ঘণ্টা এমন কষ্ট ভোগ করার পর এরপর রাত ৮টার দিকে তার ভাই মারা যান বলে জানান শংকর।
শংকর অভিযোগ করে বলেন, “হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আমার ভাইকে ঠিকঠাক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তাই অল্পসময়ের মধ্যে আমার ভাই মারা গেছে। এই ঘটনার বিচার চাই।”
শ্যামল দাসের ফুফাতো ভাই গজেন দাস বলেন, “আমার ভাইয়ের ১১ বছরের এক ছেলে ও ১৪ বছরের এক মেয়ে রয়েছে। এই সংসারটা এখন কীভাবে চলবে, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নার্সের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
মাদারীপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজিব মাহমুদ কাওসার বলেন, “সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তার মধ্যেও অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। যে নার্স দায়িত্ব অবহেলা করেছে, তার বিচার ও হাসপাতাল থেকে অপসারণ চাচ্ছি।”
তবে নার্স সুজাতার দাবি, তার দ্বায়িত্বে কোনো অবহেলা ছিল না। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী আমি চিকিৎসা দিয়েছি । আটটা পর্যন্ত আমার ডিউটি ছিল, তখন পর্যন্ত রোগী সুস্থ ছিলেন। তারপর কি হয়েছে আমার জানা নাই।”
অন্যদিকে চিকিৎসক রিয়াদ মাহমুদের দাবি, সঠিকভাবেই ভবনের নিচতলার জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হয় শ্যামল দাসকে। কিন্তু পরবর্তীতে ভবনের ছয়তলায় কী হয়েছে, সেটা সম্পর্কে তিনি অবগত নন।
এ বিষয়ে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ও জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মুনীর আহম্মেদ খান বলেন, “হাসপাতাল থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুঠোফোনে বিষয়টি আমাকে অবগত করেছেন। ঘটনা কি ঘটেছে, সবকিছুই পর্যালোচনা করে কারও দোষ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি এএইচএম সালাউদ্দিন বলেন, হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হচ্ছে, এমন খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এ ব্যাপারে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি।