হঠাৎ কর্মবিরতির কারণে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে থাকা দর্জিঘরগুলোতে বিরাজ করছে সুনশান নীরবতা।
Published : 12 Jun 2024, 11:02 PM
শেরপুরে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন জেলা শহরের বিভিন্ন দর্জিঘরের কারিগররা।
দাবি আদায়ে গত ছয় দিন ধরে তারা কাজ বন্ধ রেখেছেন। এতে ঈদকে সামনে রেখে জেলা শহরে পোশাক তৈরির অর্ধশতাধিক দর্জিঘরের কার্যক্রম বন্ধ আছে। ফলে বিপাক-ভোগান্তিতে পড়েছেন মালিক ও গ্রাহকরা।
মালিকপক্ষের দাবি, গত ঈদে দাবির মুখে কারিগরদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু এবার ঈদকে সামনে রেখে তাদের জিম্মি করছেন তারা।
ঈদ উপলক্ষে যেখানে রাত-দিন কর্মব্যস্ততায় মুখর থাকার কথা, সেখানে হঠাৎ কর্মবিরতির কারণে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে থাকা দর্জিঘরগুলোতে বিরাজ করছে সুনশান নীরবতা।
ছয় দিন ধরে কাজ বন্ধ রাখলেও সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হচ্ছে না কেউ।
কারিগররা বলেন, তারা কাজ করেন মালিকের দোকানে। কাজের বিনিময়ে মজুরি পান। মালিকরা যে মজুরি দেন, তাতে পোষায় না। গত ১৫ দিন আগে থেকে মৌখিকভাবে মালিকপক্ষকে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাল মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরির দাবি জানিয়ে এলেও মালিকরা এতে কর্ণপাত করেননি।
তিনি বলেন, “মালিকরা একটা শার্টের মজুরি নেন ৪০০ টাকা আর আমাদের দেন মাত্র ১২১ টাকা। এই অল্প টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। আমাদের বেশি দাবি নয়। মাত্র ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি করলেই আমরা কাজে ফিরব।”
কয়েকজন নারী গ্রাহক বলেন, প্রতি বছরই কাপড় কিনে ঈদের আগে পছন্দ অনুযায়ী পোশাক বানিয়ে নেন তারা। এজন্য শহরের ‘লেডিস টেইলার্স’গুলোই ভরসা। তবে এবার দর্জিরা ধর্মঘটে থাকায় কোনো টেইলার্স কাপড়ের অর্ডার নিচ্ছে না। ফলে কাপড় কেনা হলেও তা দিয়ে ঈদের নতুন পোশাক তৈরি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তারা।
আবুল হোসেন নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, “প্রতি বছর নতুন পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে ঈদের নামাজ পড়ি। এবারও প্রস্তুতি নিয়ে পায়জামা-পাঞ্জাবির কাপড় কিনলাম। কিন্তু দর্জিদের কর্মবিরতির ফলে জামা তৈরি করতে পারছি না। ঈদে নতুন জামা পরতে পারবো কিনা তা নিয়ে আমি সন্দিহান।
জেলা পর্যায়ে কর্মরত একজন সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঈদের ছুটির সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি চলে যাব। স্ত্রী ও মেয়ের কাপড় দর্জিঘরে পড়ে আছে। এখন কী করব বুঝতে পারছি না। বাচ্চাদের পছন্দের কাপড় ছাড়া ঈদ ভাবতে পারছি না।
এ বিষয়ে শেরপুর দর্জি মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি নেপাল চন্দ্র সরকার ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোছা আলম সরকার জানান, শ্রমিকদের ধর্মঘট সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। চলতি বছরের ৯ মার্চ শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মেনে নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়। সেসময় মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে লিখিত চুক্তি হয়। সেই চুক্তিতে আগামী ২০২৬ সালের আগে আর মজুরি বৃদ্ধি হবে না বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে কোনো ধরনের নোটিস না দিয়ে তারা আবার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে ঈদে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
এদিকে, ঈদকে সামনে রেখে দর্জিঘরগুলো অচল হয়ে পড়ায় শার্ট, প্যান্ট, পাজামা ও পাঞ্জাবি ছাড়াও মেয়েদের জামা তৈরির কাপড়ের দোকানগুলোতে বেচাকেনা প্রায় শূন্যে নেমেছে। ফলে গজ কাপড় বিক্রির দোকানগুলো লোকসানে পড়েছে।
দর্জি শ্রমিকদের কর্মবিরতির বিষয়ে শেরপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আসাদুজ্জামান রওশন বলেন, “বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের কাজে ফেরানোর চেষ্টা করব।”