জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে যেন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি না থাকতে পারে তার দাবি জানিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও নতুন প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়েছে ছাত্রলীগ।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় অবরোধ করেন শাখা ছাত্রলীগের একাংশ। সেখানে পাঁচটি হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নেতৃত্ব দিলেও ছিলেন না শাখা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক।
এরপর বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ ও তালা দেয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
সকাল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় অবরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক জব্বার হল থেকে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল থেকে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আর-রাফি চৌধুরী, একই হল থেকে আরেক সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আকাশের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে সহ-সভাপতি প্রীতম আরিফ, শহীদ সালাম-বরকত হল থেকে সহ-সভাপতি রাতুল রায় ধ্রুব এবং আল বেরুনী হল থেকে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুর রহমান এনামের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিয়োগে বিএনপি-জামায়াত তথা স্বাধীনতা বিরোধীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
এ সময় সহ-সভাপতি এনামুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী কোনও শক্তি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকতে পারে সেজন্য আমরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস ঘেরাও করেছি।
“আমরা জানতে পেরেছি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের পরিচালক বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের একাধিক বিবৃতিতে তার নাম উল্লেখ আছে।
“আমরা চাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকুক। আমরা তার অপসারণের দাবি জানাই।"
এ সময় তাদের এই অবরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সমর্থন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে সকলের পক্ষে যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আর-রাফি চৌধুরী বলেন, "শীর্ষ নেতৃত্বকে আমরা একাধিকবার জানিয়েছি। তারা বলেছে দ্রুত একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তারা এ বিষয় নিয়ে আর কর্ণপাত করেননি।
“তাই এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির একজনকে নিয়োগ করার প্রতিবাদে আমরা প্রত্যেক নেতা-কর্মী নিজেদের নৈতিক অবস্থান থেকে এখানে দাঁড়িয়েছি এবং অবরোধ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি।"
নেতারা জানান, তাদের আন্দোলনে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সায় নেই। নিজ উদ্যেগেই তারা আন্দোলনে নেমেছেন।
এরপর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরদের ভোগান্তি ও বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা চলমান থাকায় তালা খুলে দেয় তারা।
তবে বুধবারের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পরিচালককে অপসারণ না করলে বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এ দিকে বেলা ১টার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল-সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হয়।
এ সময় আক্তারুজ্জামান সোহেল সাংবাদিকদের বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও সুপারিশপ্রাপ্ত না হয় সেদিকে ছাত্রলীগ সদা তৎপর।
“উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথায়ও কোনো নিয়োগে যেন স্বাধীনতাবিরোধ কাউকে বসানো না হয় সেটা নিশ্চিত করব।"
এ দিকে সকালে একাংশের অবরোধ বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বলেন, "ছাত্রলীগের কেউ সকালের অবরোধ সম্পর্কে আমাদের কিছু বলেনি।"
পরে বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম এসে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে বেলা ৩টার দিকে নতুন প্রশাসনিক ভবনের তালাও খুলে দেওয়া হয়।
এ দিকে উভয় অবরোধেই উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান।
তিনি বলেন, “আমরা ছাত্রলীগের দাবিগুলো শুনেছি। আমরা আলোচনা করে একটা সমাধান দিব।”
এ প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, "পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পরিচালকের অপসারণের বিষয়ে নিয়ে যে দাবিটি আসছে আমরা বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রেও যদি স্বাধীনতাবিরোধী কেউ থাকে সেটাও আমরা যাচাই-বাছাই করব।"