ফেনীতে রাস্তা পাকাকরণে ‘বালুর বদলে মাটি’, কাজ বন্ধের নির্দেশ

স্থানীয় এক যুবকের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিরা দেখেও না দেখার ভান করে চলে।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2022, 06:52 PM
Updated : 14 Nov 2022, 06:52 PM

ফেনীর ফুলগাজীতে প্রায় ৭০০ মিটার রাস্তা পাকাকরণে বালুর বদলে মাটি দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নের উত্তর তারাকুছায় হাজী আব্দুল মান্নান সড়কটিতে এসব অনিয়মের অভিযোগে ইতোমধ্যে দুই দফা কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫০ লাখ ২৭ হাজার টাকা রাস্তাটির পাকাকরণে বরাদ্দ দিয়ে কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। কাজটি করছেন ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম।

স্থানীয় বাসিন্দা আলী নেওয়াজ বলেন, “নিজের প্রভাব খাটিয়ে এ রাস্তা পাকাকরণের দায়িত্ব নেন সেলিম চেয়ারম্যান। কাজ পেয়ে নানা অনিয়ম, গাফেলতি, নিম্নমানের ইট ও নির্মাণ কাজে বালির পরিবর্তে ফসলী জমির মাটি ব্যবহার করা হয়েছে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “আমজাদহাট বাজারের পাশে একটি ইটভাটার সামনে ফসলী জমি থেকে এসব মাটি কেটে রাস্তার নির্মাণ কাজের স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে।”

শরীফ নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, “রাস্তার পাকাকরণের কাজ শুরু করে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে মানুষের যোগাযোগে সমস্যার সৃষ্টি হয়। পরে এলাকার কয়েকজন যুবক মিলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল আলিম মজুমদারের কাছে গেলে তিনি দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দেন।

“কিছুদিন পর এক সকালে কাজ শুরু করা হলেও দুপুরে অজানা কারণে আবার বন্ধ হয়ে যায়। এসব অনিয়ম স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা দেখেও না দেখার ভান করে চলছে।”

কাজ বন্ধের নির্দেশনার কথা স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত দুই নারী শ্রমিক বলেন, প্রকৌশলী কাজ বন্ধ করে দেওয়ার একদিন পর সেলিম চেয়ারম্যান আমাদের আবার কাজে ফিরতে বলেছেন। এখন মাটি থেকে বালু আলাদা করার কাজ করছি।

স্থানীয় বালু ও মাটি ব্যবসায়ী নূর নবী বলেন, “আমি সেলিম চেয়ারম্যানের কাছে বালি-মাটি বিক্রি করেছি। আমি বিক্রেতা, সেগুলা তিনি কোথায় ব্যবহার করবেন তা আমার জানার বিষয় না।”

আমজাদহাট ইউপির চেয়ারম্যান মীর হোসেন মীরু বলেন, “রাস্তাটি আমার বাবার নামে করা হচ্ছে। বালির পরিবর্তে মাটি ব্যবহার এবং অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। কাজ করছেন ঠিকাদার সেলিম। বিষয়টি তিনি ভালো বলতে পারবেন।”

উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সৈয়দ আসিফ মুহাম্মদ বলেন, “নির্মাণ কাজে মাটি মিশ্রিত বালু ব্যবহার, নিয়ম মাফিক দপ্তরকে না জানানো, নির্দেশনা থাকলেও কোনো ধরনের পরীক্ষা প্রতিবেদন ছাড়া রাস্তা পাকাকরণ কাজ চালিয়ে নেওয়ায় সেলিম চেয়ারম্যানকে কাজ বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

“আদেশ অমান্য করে তিনি আবার কাজ শুরু করলে উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে পাঠিয়ে পুনরায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জেলা কার্যালয়ও তাকে ত্রুটি সংশোধন করে লিখিত জবাব দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।”

অভিযোগ প্রসঙ্গে ফুলগাজী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “এলাহী এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বাবুলের সঙ্গে আমি থাকি। এলজিইডি সরাসরি আমার নাম বলতে পারবে না। এমন কিছু হলে তারা কাগজপত্রের মাধ্যমে প্রমাণ করুক।”

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আলী বলেন, “উন্নয়ন কাজে অনিয়ম বা দুর্নীতির সুযোগ নেই। যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”