গোপালগঞ্জে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ, কাঠ ব্যবহারে ‘ব্যবস্থা’

‘ভাটাগুলো উচ্ছেদের পর মানুষ, গাছপালা ও ফসল গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত হয়েছে।’

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2022, 06:11 AM
Updated : 25 Dec 2022, 06:11 AM

বায়ু দূষণ রোধে গোপালগঞ্জে দশটি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। পাশাপাশি ভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পড়ানো বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মনিরুজ্জামান শেখ জানান, গোপালগঞ্জের ৫২টি ইটভাটার মধ্যে লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে দশটি ইটভাটা এই মৌসুমে ইট প্রস্তুত শুরু করে।

নিগি-১ ব্রিক্স, এসআরবি ব্রিক্স, লালপরি ব্রিক্স, স্টার ব্রিক্স, ম্যাক্স ব্রিক্স, হাসেম ব্রিক্স, আরএসআরবি ব্রিক্স, এসআরআরবি ব্রিক্স, মেঘনা ব্রিক্স ও জেএসবি ব্রিক্স কাঠ দিয়ে ইট পুড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি করে আসছিলো।

এ কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়ান ও ফায়ার সার্ভিস যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই দশ ইটভাটা উচ্ছেদ করে এবং তাদের মালিকদের কাছ থেকে ২৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

এছাড়া চলতি বছর চারটি অবৈধ ইটভাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

পরিবেশ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “দশটি ভাটা অবৈধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করে আসছিলো। এই ভাটাগুলো থেকে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস বাতাসে ছড়াচ্ছিল; যা মানবদেহ, পরিবেশ ও উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর।

এখন ৩৮টি ইটভাটায় পরিবেশবন্ধব চিমনি রয়েছে। এইভাটাগুলো পরিবেশ দূষণ ঘটায় না বলে দাবি আসাদুজ্জামানের।

ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার বন্ধ প্রসঙ্গে এ কর্মকর্তা বলেন, “ইটভাটায় কাঠ ব্যবহারে সরকারি নিষেধ রয়েছে। কাঠ ব্যবহার বিষয়টি আমরা জরিপ করে দেখছি। যেসব ভাটা এখনও কাঠ ব্যবহার করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইটভাটা মালিক বলেন, আগে প্রতিটন কয়লা আমরা সাত হাজার টাকায় কিনতাম। এখন প্রতিটন কয়লা ২৮ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। কয়লা দিয়ে ইট প্রস্তুত করতে খরচ বেড়েছে চারগুণ। কয়লা দিয়ে পোড়ানো প্রতিটি ইট ১৮ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে।

“এত দামে কেউ ইট কিনে না। তাই কাঠ দিয়ে ইট পুড়িয়ে প্রতিটি ইট ১৩ থেকে ১৪ টাকা দরে বিক্রি করছি। কয়লার দাম বৃদ্ধিতে আমাদের ইটভাটা ব্যবসা চরম সঙ্কটের মুখে পড়েছে।”

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোড়াদাইড় গ্রামের কৃষক ছাবেদ আলী মিয়া বলেন, “আমাদের গ্রাম থেকে সব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ইটভাটা উচ্ছেদের পর ক্ষেতের শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফসলের মান বেড়েছে। গাছপালায় সবুজভাব ফিরে এসেছে। এতে মনে হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়েছে।”

একই উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের সামাদ সরদার বলেন, “সরকার আইন করে ইটভাটায় কাঠ পড়ানো বন্ধ করেছে। সরকারের এই আইন বাস্তবায়ন করে বৃক্ষ সম্পদ রক্ষা করতে হবে। তাহলেই পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে।”

পরিবেশ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন হক বলেন, “পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। পরিবেশের ক্ষতি করে এমন ইটভাটা আমরা রাখব না। ভাটায় কাঠ পোড়নো বন্ধে আমরা কাজ করছি।”

গোপালগঞ্জ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. রাজিব হোসেন বলেন, ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠের ব্যবহার বেড়ে গেলে পরিবেশের হুমকি বাড়বে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করা হলে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাবে।

এই কাঠ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে ভাটা থেকে বাতাসে অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়াবে।

এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।