এক পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী নিরাপত্তা কর্মী ‘বটি হাতে’ ভোরবেলা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড টেকনোলজির আবাসিক বাসিন্দারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে তারা ওই নারীর আচরণে পরিবর্তন দেখতে পান। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
শুক্রবার ভোরবেলা ছাত্রীরা নামাজ পড়তে উঠলে তিনি তাদের ‘বটি হাতে’ ধাওয়া দেন। তখন পাশের ছাত্র হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীরা এসে ওই নিরাপত্তা কর্মীকে শান্ত করেন।
শনিবার ছুটির দিন থাকায় বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড টেকনোলজি (আইএইচটি) কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও এর কোনো প্রতিকার পাননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছাত্রীরা। এ ছাড়া হোস্টেল সুপারের সঙ্গেও যোগযোগ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ বিষয়ে আইএইচটির অধ্যক্ষ ডা. মানস কুমার কুণ্ডু শনিবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনিবার সকালে বিষয়টি ছাত্রদের মাধ্যমে শুনেছি। যতদূর জানি ওই নিরাপত্তা প্রহরীর মানসিক সমস্যা শুরু হয়েছে। যা বিগত দিনে ছিলো না।”
“সাপ্তাহিক বন্ধ থাকার কারণে শনিবার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বসা সম্ভব হয়নি। রোববার বিষয়টি নিয়ে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। ছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসেই আইএইচটির ক্যাম্পাস। ওই ক্যাম্পাসের মধ্যে ছাত্রী নিবাস রয়েছে। সেখানে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী থাকেন। ছাত্রী নিবাসে দুইজন নারী নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার একজন হলেন ওই পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী। ছাত্রী নিবাসের পাশে রয়েছে ছেলেদের হোস্টেল।
একজন আবাসিক ছাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত থেকে ওই নিরাপত্তা কর্মীর অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়। গভীর রাতে হাড়হিম করা শীতের মধ্যে তিনি গোসল করেন, নামে-বেনামে গালি দিচ্ছিলেন। শুক্রবার রাতেও তাকে গোসল করতে দেখা যায়।
“শনিবার ভোরে হোস্টেলের এক ছাত্রী তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য অজু করতে বের হন। তখন ওই নারী রান্নাঘর থেকে বটি নিয়ে তাকে ধাওয়া দেন। তার চিৎকারে অন্যরা এগিয়ে গেলে সবাইকেই তিনি ধাওয়া করেন।
শিক্ষার্থী বলেন, “তখন সবাই যার যার ঘরে ঢুকে চিৎকার করতে থাকেন। চিৎকার শুনে পাশের ছেলেদের হোস্টেল থেকে ছাত্ররা এসে ওই নারীকে শান্ত করেন।”
তিনি বলেন, “হোস্টেলের সুপার সুবোধ রঞ্জন স্যার থাকেন না। তাই কোনো সমস্যা হলে, সমাধানে কেউ আসেন না। হোস্টেলের প্রবেশ কক্ষে তালাবদ্ধ থাকায় কেউ এগিয়ে আসতে পারবেন না। তার মধ্যে ওই নারী শনিবার রাতে দায়িত্ব পালন করবেন। সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছি।”
আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, হোস্টেল সুপারের ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বন্ধের দিন থাকায় অধ্যক্ষ স্যারও ক্যাম্পাসে আসেননি।
ছাত্র হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থী আসিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোর রাতে ছাত্রীদের ডাক-চিৎকার শুনে আমরা ছুটে যাই। কিন্তু মূল গেইট বন্ধ থাকায় বাইরে থেকে নিরাপত্তা কর্মী ও ছাত্রীদের শান্ত করার চেষ্টা করেছি।“
শাম্মী আকতার নামে এক আবাসিক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই নারীর মেয়ের বয়স যখন দুই বছর তখন তার স্বামী মারা যান। তিনি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে চাকরি করতেন। সেই চাকরি চলে গেছে। খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে ছিলেন। খুব কষ্ট করে মেয়েকে বড় করে বিয়ে দিয়েছেন।
“পারিবারিক কারণে হয়তো ওই নারী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এজন্য হয়তো চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। নতুন শিক্ষার্থীরা একটু ভয় পেয়েছিলেন। তার মেয়েকে খবর দেওয়া হয়েছে।
শাম্মী আরও বলেন, “স্যাররা বলেছেন, একটু সহ্য করো। আমরা দেখতেছি। কারো তো ক্ষতি করে না।”
হোস্টেল সুপারের ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মানস কুমার কুণ্ডু বলেন, “স্থায়ীভাবে হোস্টেল সুপার না থাকার কারণ হলো সেখানে আবাসিক সুবিধা নেই। তাই তিনি দিনে দায়িত্ব পালন করেন, সন্ধ্যার পর বাসায় চলে যায়।”