নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও নিরাপদ পর্যটনের জন্য ‘সমুদ্র সন্ধ্যা’

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার হবে সব পেশার, শ্রেণির, ধর্মের, লিঙ্গের মানুষের জন্য সমান নিরাপদ। এ সমুদ্র সৈকতসহ কোথাও যেন আর নারীর প্রতি সহিংসতা না হয়।

একই সঙ্গে কক্সাবাজার পর্যটনের জন্য নিরাপদ হোক- এমন দাবিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার পর পর সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকায় শুরু হয় ‘সমুদ্র সন্ধ্যা’।

কক্সবাজারের কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীদের আয়োজনে গান ও আড্ডা বিষয়ক অনুষ্ঠানে পর্যটকদের পাশাপাশি জড়ো হন স্থানীয় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সন্ধ্যায় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপর পরিবেশিত হয় ‘এমন দেশটি কোথাও পাবো’, ‘মুক্তির মন্দিরে সোপান তলে’সহ সমবেত ও একক কণ্ঠে গানের অনুষ্ঠান।

উপস্থিত নানা পেশাজীবী মানুষসহ পর্যটকরা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ এবং পর্যটনের জন্য নিরাপদ সৈকতের পক্ষে দাবি জানিয়ে কথা বলছেন।

নারী অধিকার ও উন্নয়ন কর্মী মাহমুদ খাঁর সভাপতিত্বে কথামালায় অংশ নেন নারী নেত্রী শাহরিয়ার পারভীন লাকি, জেলা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মনির মোবারক ও জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি তন্ময় দাশ, মানবাধিকার কর্মী সামিরা আক্তার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আজিমা আক্তার ইমা।

অনুষ্ঠানে গান ও আবৃত্তির ফাঁকে ফাঁকে চলে নারীর প্রতি সংহিসতা ও নিরাপদ পর্যটন নিয়ে কথামালা।

সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নারীদের হেনস্তার কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কিটকটে একা বসে থাকা ‘এক তরুণীকে’ লাঠি হাতে ঘিরে ধরেছেন চার যুবক। তারা প্রথমে ‘ওই তরুণীর’ পরিচয় এবং কেন রাতে একা সৈকতে অবস্থান করছেন জানতে চান। ‘তরুণীটি’ ঘুরতে আসার কথা জানালে তারা সন্তুষ্ট হননি।

এক পর্যায়ে যুবকরা সৈকতের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলে ওই ‘তরুণীকে’ সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।

দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, আরেক ‘তরুণীকে’ ঘিরে রয়েছে কিছু মানুষ। তাদের মধ্যে লাঠি হাতে আছেন কয়েকজন যুবক।

ওই যুবকদের মধ্যে একজন লাঠি দেখিয়ে ওই ‘তরুণীকে’ নির্দেশ দিচ্ছিলেন কান ধরে উঠবস করতে। পরে ভয়ার্ত ওই ‘তরুণী’ উঠবস করতে থাকলে ঘিরে থাকা লোকজনকে অশ্লীল মন্তব্য করতে শোনা গেছে ভিডিওতে।

আরেকটি ভিডিওতে সৈকতের ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ভুক্তভোগী এক ‘তরুণী’সহ আরও একজনকে দেখা যায়।

সেখানে সাধারণ পোশাকের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে এক ‘তরুণী’ কান্নারত অবস্থায় অভিযোগ করতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর সেখানে প্রবেশ করেন লাঠি হাতে ‘তরুণীকে’ উঠবস করানো সেই যুবক।

এ সময় ওই ‘তরুণী’ যুবকে দেখিয়ে বলছিলেন, “উনি আমার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। দয়া করে ফোনটি ফেরত দিন। প্রয়োজনে মোবাইলে থাকা সবকিছু ডিলিট করে দেব।”

এসব ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তৎপর হয় পুলিশ। ভিডিও দেখে ফারুকুলকে শনাক্ত করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ব্যাপারে মামলাও হয়েছে। ফারুকুলকে পুলিশ একদিনে রিমান্ডেও নেয়।

এসব ঘটনার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত হয় ‘সমুদ্র সন্ধ্যা’ শিরোনামের এই কর্মসূচি।