ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন সৈনিকের সমাধি রয়েছে।
Published : 17 Nov 2024, 09:05 PM
কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৪ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ নিজ দেশে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন সৈনিককে এখানে সমাহিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯৬২ সালে একজন সৈনিকের দেহাবশেষসহ সমাধির মাটি তার স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এরই মধ্যে জাপানের পক্ষ থেকে সাত সদস্যদের একটি ফরেনসিক দল ওই ২৪ সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন। বিশেষজ্ঞ দলের ছয়জন জাপানি এবং একজন যুক্তরাষ্ট্রের। তাদেরকে সহায়তা করছে বাংলাদেশ সরকার।
রোববার ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, সমাধিস্থলের মাটি খুঁড়তেই মিলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত জাপানি সৈনিকদের মাথার খুলিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়। সেগুলো অত্যন্ত যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন এই যুদ্ধ সমাধি ক্ষেত্র তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে। যেখানে দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম চলছে, সেখানে দর্শনার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
জাপানের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এ কাজে সহায়তা করছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক।
কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের পক্ষে সেখানে দায়িত্ব পালন করা কান্ট্রি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আবদুর রহিম সবুজ জানান, বুধবার সকাল থেকে জাপানের প্রতিনিধিদল কার্যক্রম শুরু করে। এখানে সমাহিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন সৈনিকের মধ্যে জাপানের রয়েছে ২৪ জন। তারা ২৪ জন সৈনিকের দেহাবশেষই সরিয়ে নিয়ে যাবে। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৭৩৮ সেনাকে সমাহিত করা হয়। ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন যোদ্ধার মধ্যে মুসলিম ধর্মের ১৭২ জন, বৌদ্ধ ধর্মের ২৪ জন, হিন্দু ধর্মের দুজন এবং বাকিরা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী।
এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন, কানাডার ১২ জন, অস্ট্রেলিয়ার ১২ জন, নিউজিল্যান্ডের চারজন, দক্ষিণ আফ্রিকার একজন, অবিভক্ত ভারতের ১৭১ জন, রোডেশিয়ার (জিম্বাবুয়ে) তিনজন, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন, বার্মার একজন, বেলজিয়ামের একজন, জাপানের ২৪ জন এবং পোল্যান্ডের একজনের সমাধি রয়েছে।
প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের হাইকমিশনারসহ তাদের প্রতিনিধিরা এই সমাধিস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহতদের স্মরণ করেন। সে ধারাবাহিকতায় এ বছরের ৯ নভেম্বর ১৩ দেশের কূটনীতিকরা সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।