টাঙ্গাইলে নৈশ কোচে ডাকাতি ও দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আরও চারজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া ছয় জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পাঠানো হয়।
টাঙ্গাইল আদালত পুলিশের পরিদর্শক তানবীর আহম্মেদ জানান, মঙ্গলবার বিকালে ১০ আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
“এদের মধ্যে চারজন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন। বাকি ছয় জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।”
টাঙ্গাইল জ্যেষ্ঠ বিচরিক হাকিম ফারজানা হাসানাত ছয় আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
এছাড়া পৃথক চারটি জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেন অপর চারজন।
এ নিয়ে এই ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো এবং তাদের মধ্যে মোট সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেন।
আগে আরও তিনজন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এরা হলেন রাজা মিয়া (৩২), আব্দুল আওয়াল (৩০) ও নুরনবী (২৬)। এরা বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে রয়েছেন।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ১০ জনকে সোমবার রাতে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব-১২।
এরা হলে রতন হোসেন (২১), মো. আলাউদ্দিন (২৪), সোহাগ মন্ডল (২০), খন্দকার হাসমত আলী ওরফে দীপু (২৩), বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস (২১), মো. জীবন (২১), আব্দুল মান্নান (২২), নাঈম সরকার (১৯), রাসেল তালুকদার (৩২) ও আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান (১৮)।
গত ২ অগাস্ট কুষ্টিয়া থেকে ঢাকামুখী ঈগল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় পৌছলে যাত্রীবেশে একদল লোক ডাকাতি ও এক নারীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
টাঙ্গাইল র্যাব-১২ এর ৩ নম্বর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, সোমবার রাত ৮টার দিকে গ্রেপ্তার ১০ জনকে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে আনা হয়। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে রোববার (৭ অগাস্ট) রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-১২ ও ১৪।
র্যাব জানায়, বাসের হেলপারের ছদ্মবেশে ২০১৮ সাল থেকে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছিলেন রতন হোসেন। তিনি এ চক্রের দলনেতা। তার অধীনে ১৩ থেকে ১৫ জন্য সদস্য রয়েছে। ডাকাতির ঘটনায় দুই দফার কারাভোগও করেছেন তিনি। দ্বিতীয় দফায় ৯ মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আসেন।
টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, এ মামলায় গ্রেপ্তার ১০ জনকে সোমবার রাতে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ পর আজ (মঙ্গলবার) বিকালে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলা হয়।
এদের মধ্যে রতন হোসেন, সোহাগ মন্ডল, খন্দকার হাসমত আলী ওরফে দীপু, বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস, মো. জীবন ও আব্দুল মান্নানকে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
আর আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরের মো. সাদেক মিয়ার ছেলে মো. আলাউদ্দিন, গাজীপুরের কাশিমপুরের মো. মমিন সরকারের ছেলে মো. নাঈম সরকার, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের মো. আবুল তালুকদারের ছেলে রাসেল তালুকদার এবং একই এলাকার প্রয়াত আবুল তালুকদারের ছেলে মো. আসলাম তালুকদার রায়হান।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২ অগাস্ট রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী ঈগল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা একদল যুবক দল অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের বেঁধে ফেলে। কয়েক মিনিটের মধ্যে যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেয়।
এরপর এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করে তারা। বাসটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখে। পরে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল- ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির স্তূপে বাসটি উল্টে গেলে তারা পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: