কুমিল্লার বুড়িচংয়ের বাক্সিমুলের মাধবপুর রেললাইন থেকে সকালে তিন যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
Published : 23 Apr 2025, 04:05 PM
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় রেললাইনের উপর পড়ে থাকা খণ্ডিত তিন লাশের একজনের পরিচয় মিলেছে।
সাইফুল ইসলাম নামের ওই যুবক তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনেই থাকতেন। তিনি রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। মাদকাসক্ত হয়ে কাজ ছেড়ে দিয়ে ‘টোকাই’ হয়ে যান বলে পরিবার জানিয়েছে।
সাইফুলের বাবা মোখলেছুর রহমান এবং মা আসমা বেগম কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে একটি ঘরে বসবাস করেন। তাদেরও নির্ধারিত কোনো পেশা নেই।
কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন ফাঁড়ির (জিআরপি) এসআই সোহেল মোল্লা বলেন, “গভীর রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ওই তিন যুবকের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছি।
“সাইফুলের পরিচয় জানা গেছে। লোকমুখে আমরা অপর একজনের নাম ‘তুহিন’ বলে জেনেছি। তবে তার কোনো ঠিকানা পাওয়া যায়নি। বাকিজনের সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
তবে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের প্রাথমিক ধারণা, বাকি দুজন হয়ত সাইফুলের ‘নেশার’ সঙ্গী এবং তারাও ‘টোকাই’।
দুপুরে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মোখলেছুর রহমান ও আসমা বেগম ছেলে সাইফুলকে দাফনের জন্য মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলছেন।
সাইফুলের মা আসমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, “ছেলেটাকে যে দাফন করব সেই টাকাও নেই। তার বাবাও বাউণ্ডুলে। কোনোরকম কাজকর্ম করে আমি সংসার চালাই। ছেলেটা কথা না শুনে রংমিস্ত্রির কাজ ছেড়ে দিয়েছে। গতকাল দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। তারপর শুনি রেললাইনে তার মরদেহ পড়ে আছে।”
সাইফুলের বাবা মোখলেছুর রহমান বলেন, “ময়নাতদন্তের পর মরদেহ দিলে আমরা দেবিদ্বার নিয়ে ছেলেকে দাফন করব।”
এদিকে ঘটনাস্থল বুড়িচং উপজেলার বাক্সিমুলের মাধবপুর রেললাইনে গিয়ে দেখা গেছে, রেলের স্লিপার ও লাইনের উপর ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। বেশ কয়েক টুকরা টি-শার্ট ও দুই জোড়া জুতা পড়ে আছে সেখানে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের বুড়িচংয়ের মাধবপুর এলাকায় ১৬২ নম্বর পিলারের কাছ থেকে তিন যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মাধবপুর গ্রামের বাসিন্দা ইজিবাইক চালক শাহেদ মিয়া বলেন, “আমি ভোর ৬টা ৫ মিনিটে রেললাইনের পাশে হাঁটতে আসি। এ সময়ে এসে দেখি একজনের মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে আর দুইজনের পা বিচ্ছিন্ন। যাদের পা বিচ্ছিন্ন হয়েছে তাদের মধ্যে একজন তখনও জীবিত ছিল সে আমার কাছে পানি চায়। কিন্তু গ্রাম দূরে হওয়ায় সে সময় পানি আনার কোনো সুযোগ ছিল না। এর মধ্যেই সে মারা যায়। ধারণা করছি, ভোর সাড়ে ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে কোনো ট্রেন তাদের উপর দিয়ে গিয়েছে।”
ফকিরবাজার জঙ্গলবাড়ির গাড়িচালক মেহেদী হাসান বলেন, যে তিনজন ট্রেনে কাটা পরে মারা গেছে তারা আশপাশের গ্রামের কেউ না। অনেকেই এসেছেন কিন্তু কেউই তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ এসে মরদেহগুলো নিয়ে গেছে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয় বলেন, “যেখানে তিনজনের মরদেহ পাওয়া গিয়েছে সেখানে একটি পরিত্যক্ত ডাকবাংলো আছে। এখানে অনেকেই মাদক সেবনের জন্য আসে বলে আমরা বিভিন্ন সময়ে খবর পাই।
“ধারণা করছি, তারা এখানে হয়তো ঘুরতে এসেছিল কিংবা মাদক সেবনের জন্য এসেছিল। এসে রেললাইনে ঘুমিয়ে পড়লে তাদের উপর দিয়ে ট্রেন চলে যায়।”
বুড়িচং থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, “মাধবপুর এলাকায় রেললাইনে তিন যুবকের খণ্ডিত মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেনের নিচে পড়ে তারা নিহত হন।”
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে লাকসাম থেকে জিআরপি পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।