ঝিনাইদহের কলেজশিক্ষক মো. আকতারুজ্জান ও তার স্ত্রী নুরজামান বেগম কলকাতা খেকে চেন্নাই যাচ্ছিলেন করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে, যেটির ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রায় তিনশ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
দুর্ঘটনা থেকে নিজেরা অক্ষত থাকলেও ভয়ঙ্কর সেই দুর্ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন এই দম্পতি। সেই সময়ের বিবরণ দিয়েছেন এই কলেজশিক্ষক যিনি পরে চেন্নাই যাওয়ার জন্য অন্য ট্রেনে ওঠেন।
কলকাতার শালিমার স্টেশন খেকে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার চাঁদ রতনপুর গ্রামের এই আকতারুজ্জামান ও তার স্ত্রী নুরজাহান। তারা ভেলরে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন।
আকতারুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বৃহস্পতিবার [১ জুন] তারা বাড়ি থেকে রওনা দেন। শুক্রবার বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে কলকাতার শালমার স্টেশন থেকে তারা করমন্ডল এক্সপ্রেসে যাত্রা শুরু করেন। গন্তব্য ভেলর।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে বলেশরের বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় পৌঁছলে বিকট শব্দ ও ঝাঁকুনি অনুভব করেন। চারদিকে মানুষের আর্তচিৎকার, চেঁচামেচিতে তারাও আতংকিত হয়ে পড়েন।
তারা ট্রেনের পিছনের দিকের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগিতে ছিলেন।
চিৎকার-চেঁচামিচিতে ট্রেন থেকে নেমে পড়েন। সামনের দিকে এগুতে গেলে স্থানীয়রা বাধা দেয়। ততক্ষণে বুঝতে পারেন তাদের ট্রেন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়েছে।
“উদ্ধারকর্মীরা এসে গেছে। অ্যাম্বুলেন্স আসা-যাওয়ার সাইরেনের শব্দ। ভাষায় বর্ণনাতীত সে পরিস্থিতি। কী করব বুঝতে পারছি না। এরপর সেখানে থেকে আমাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। রাত ১টার দিকে বাসে তুলে দেয় এবং সেখান থেকে যাই ১৮০ কিলোমিটার দূরে ভুবনেশ্বর স্টেশনে।”
শনিবার সেখান থেকে তাদের চেন্নাইগামী বনশ্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে তুলে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রোববার সকালে চেন্নাই পৌঁছাবেন জানিয়ে আকতারুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনার যে ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছেন তা ‘বাকি জীবন মনে থাকবে’।
শুক্রবার সন্ধ্যায় উড়িষ্যা রাজ্যের বলেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনায় পড়ে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং ব্যাঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। একই সঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় একটি মালগাড়িও।
ভারতের ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী এ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৮৮ হয়েছে বলে জানিয়েছে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার। আহত হয়েছেন আটশতাধিক মানুষ। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।