Published : 02 Jan 2025, 09:55 PM
সরকার পতনের পর রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত নগর ভবনের সংস্কারকাজে ‘খাপলা’ দেখতে পারছে দুদক।
দরপত্র ছাড়াই ‘রিকুয়েস্ট ফর কোটেশন মেথডে’ কাজ পাওয়া তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অর্ধেক কাজ শেষ করে ফেললেও সব কাগজপত্র দেখাতে পারেনি সিটি করপোরেশন। ‘রিকুয়েস্ট ফর কোটেশন মেথডে’ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কাজ করা যায়। কিন্তু সেখানে তিনটি ঠিকাদারকে এরই মধ্যে প্রায় ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে সিটি করপোরেশন।
কাজের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনে যায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের একটি দল। তারা কয়েকটি দপ্তরে যান এবং ফাইলপত্র খতিয়ে দেখেন।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইনের নেতৃত্বে এই অভিযানে ছিলেন সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ সিদ্দীক ও উপ-সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান।
তাদেরকে দীর্ঘ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে বসিয়ে রাখা হয়। পরে বিল দেওয়া হয়েছে এমন তিনটি কাজের কাগজপত্র দেওয়া হয় দুদক দলকে। আর চলমান সাতটি কাজের কোনো কাগজপত্রই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সরবরাহ করতে পারেননি বলে জানায় দুদক।
৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরই সিটি করপোরেশন ভবনে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ২১ কোটি ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এসবেরই সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নগরের দড়িখড়বোনা এলাকার ইয়াহিয়া খান মিলু সাতটি কাজ করছেন। এরই মধ্যে নগর ভবনের রং করার কাজ শেষ হয়েছে। লাগানো হয়েছে নতুন থাই ও গ্লাস। এখন প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করে মেয়রের দপ্তর সংস্কার করা হচ্ছে।
অভিযান শেষে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, তারা ফরিদা ইয়াসমিন এন্টারপ্রাইজ, মাইসা এন্টারপ্রাইজ এবং শাহরিন এন্টারপ্রাইজ নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাগজ পেয়েছেন। মাইসা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী ইয়াহিয়া খান মিলু।
“শাহরিন এন্টারপ্রাইজের কাগজপত্রে স্বত্ত্বাধিকারী হিসেবে এম এম মাহফুজুর রহমান নাম লেখা আছে। তবে মোবাইল নম্বরে ফোন করে দেখা গেছে, নম্বরটি তার নয়। চাঁদপুরের এক ব্যক্তি ফোন ধরে বলেছেন, তিনি ঠিকাদার নন। কোন দরপত্রেও অংশ নেননি।”
আমির হোসাইন বলেন, “আব্দুল মালেক এন্টারপ্রাইজ নয় লাখ ৭৬ হাজার ১১৫ টাকার কাজ করছেন। এ কাজের কোটেশনে অংশ নেন তার স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠান সামিয়া ইন্টারপ্রাইজ। তিনটি কাজেই আব্দুল মালেক এন্টারপ্রাইজ, সামিয়া এন্টারপ্রাইজ ও শাহরিন এন্টারপ্রাইজ কোটেশন জমা দেয়। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান একই পরিবারের বলে জানা গেছে।”
শাহরিন এন্টারপ্রাইজ পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪০ টাকার কাজ করেছে, এই কাজের কাগজ ‘জাল’ মনে হচ্ছে বলেও জানান দুদক কর্মকর্তা আমির হোসাইন।
তিনি বলেন, “যারা কাজ পেয়েছে একই ব্যক্তি মনে হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর আলাদা আলাদা নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাছাকাছি দর দাখিল করেছে। তারা কাজ পেয়েছে। পিপিআর অনুযায়ী প্রতিযোগিতা হতে হবে। এখানে সঠিক প্রতিযোগিতা হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়নি। রং, গ্লাস ও থাই লাগানো এবং দরজা লাগানোর তিনটি কাজ একইভাবে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “কাগজ দেওয়ার জন্য আমাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়েছেন। কিন্তু মাত্র তিনটা ফাইল তারা আমাদের দিয়েছেন। আর আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এখনও সাতটা কাজ চলমান। সিটি করপোরেশন তিনটি কাজের ফাইল দিতে পেরেছে। কিন্তু এই সাতটা কাজের কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। অলরেডি কাজের হাফ ডান।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদার ইয়াহিয়া খান মিলু বলেন, “কোটেশনে অংশ নিয়ে সাতটি কাজ পেয়েছি। সেগুলো চলমান রয়েছে। সেখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। দুদদ কর্মকর্তারা ফোন করে কাগজপত্র দেখতে চেয়েছেন। আমার কাছে যেগুলো রয়েছে সেগুলো দেখাতে চেয়েছি।”
গাইড লাইন মেনে ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে নিজস্ব তহবিল থেকে তারা এ সংস্কার কাজ করছেন। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি। সময় দিলে বাকি ফাইলগুলো দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “একই পরিবারের অন্য সদস্যরাও ব্যবসা করতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই। এক পরিবার থেকে একাধিক ঠিকাদার কোটেশন দিলেও সেটি নিয়মের মধ্যে দিয়েছেন। তাই তাদের কাজ দেওয়া হয়েছে।”
এ ছাড়া যেহেতু সিটি করপোরেশনের ফান্ডে টাকা নেই সেক্ষেত্রে অনেকেই বিল পাবে না বলে এ কাজ করতে আগ্রহী হয়নি বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।