দুই সপ্তাহ আগে লাকসামের এক চিকিৎসকের বাড়িতে ওই কিশোরী ও তার মা গৃহকর্মীর কাজ নিয়েছিলেন।
Published : 03 Jun 2024, 06:31 PM
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় তিনতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবারের দাবি, তাকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পৌরসভার সাহাপাড়ার চিকিৎসক চন্দ্র মোহন সাহার বাড়ির নীচ থেকে ওই গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানান লাকসাম থানার ওসি সাহাবুদ্দিন খান।
নিহত বীপা সরকার (১৫) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের ভাগি গ্রামের প্রয়াত গৃদিধন সরকারের মেয়ে।
বীপা পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভাব-অনটনের কারণে ১৪ থেকে ১৫ দিন আগে ভোলাকোট ইউনিয়নের সংরক্ষিত (ইউপি) সদস্য চঞ্চলা সরকারের মাধ্যমে বীপা সরকার ও তার মা মিলন সরকারকে চিকিৎসক চন্দ্র মোহন সাহার বাসায় গৃহকর্মীর কাজে নিয়োগ করা হয়।
মা-মেয়েকে একসঙ্গে রাখার কথা থাকলেও কয়েকদিন পর বীপাকে লাকসামের বাসায় রেখে তার মা মিলন সরকারকে চন্দ্র মোহন সাহারের ছোট ছেলে পাপন সাহার চট্টগ্রামের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বীপার বোন সীমা সরকার বলেন, “আমার মাকে চট্টগ্রামে পাঠানোর পর থেকেই বীপাকে ওই বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।”
কিশোরীর মৃত্যুর জন্য চন্দ্র মোহন সাহা, গৃহকর্ত্রী সাধনা সাহা ও ওই বাসার কাজের লোক জড়িত বলে দাবি করেছেন বীপার মা মিলন সরকার।
তিনি বলেন, “এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমার ধারণা, বীপাকে ‘ধর্ষণের’ পর ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।“
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনাস্থলের কাছাকাছি লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও ঘটনার পর ওই কিশোরীকে কেউ হাসপাতাল কিংবা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়নি। এ ছাড়া ওই চিকিৎসকের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের।
ওই কিশোরীর মৃত্যুকে হত্যা দাবি করে নাসিরনগর উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য চঞ্চলা সরকার বলেন, “ঘটনাস্থলের কাছাকাছি হাসপাতাল থাকলেও বিপাকে সেখানে নেওয়া হয়নি। এটা খুবই সন্দেহজনক। ঘটনাটি ভালোভাবে তদন্ত করা হোক।
“স্বামী হারা মিলন সরকার ও তার মেয়েকে আমি কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কথা ছিল মা ও মেয়ে একসঙ্গে কাজ করবে। কিন্তু তারা কথা রাখেননি। আমার কাছে বিষয়গুলো সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। তাই ঘটনাটি ভালোভাবে তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”
এ বিষয়ে জানতে ডা. চন্দ্র মোহন সাহা ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
সোমবার বিকালে লাকসাম থানার ওসি সাহাবুদ্দিন খান জানান, ওই কিশোরীর পরিবার এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ করেননি। ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে মেয়েটি ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।”
নিহতের পরিবার যদি থানায় হত্যার অভিযোগ করেন তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার কথা জানিয়েছেন ওসি সাহাবুদ্দিন।