খুলনা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে।
Published : 11 Aug 2024, 02:18 AM
সরকার পতনের জেরে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
আমাদের খুলনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শনিবার বিকালে দাকোপ উপজেলার ছিটিবুনিয়া শ্মশানকালী বাজারে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন ও মিছিল হয়েছে।
দাকোপ ও কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের সাধারণ হিন্দুরা এ কর্মসূচির আয়োজন করেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও মন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদে মিছিলে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
তারা সরকার ও প্রশাসনের কাছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের আহ্বান জানান।
সমাবেশে বাংলাদেশ বেতারের গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী গৌতম সরকার বলেন, “আজ আমরা কয়েক দিন ধরে দিন-রাত পাহারা দিয়ে যাচ্ছি। নিজেদের জানমাল আর সম্ভ্রম রক্ষায় আমরা কাজ করছি। কিন্তু এখন শুধু আত্মরক্ষা করলেই হবে না, সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ চলবে।”
তিনি বলেন, “এই মাটি আমাদেরও। এটা আমাদের পিতৃপুরুষের সম্পত্তি। আমরা আর নিজ গৃহে পরবাসী হয়ে থাকতে চাই না। আমরা কোথাও যেতে চাই না।”
মানববন্ধনে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শেখর সরদার, সুব্রত মন্ডল, পরিতোষ মন্ডল, শিক্ষক রামপদ মন্ডল, সুকুমার বিশ্বাস বক্তব্য দেন।
হামলা-নির্যাতন-ভাঙচুরের প্রতিবাদে কুড়িগ্রামেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
শনিবার দুপুরে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছে এ সমাবেশ হয়।
কুড়িগ্রাম জেলার সচেতন হিন্দু সমাজের ব্যানারে সমাবেশ ও একটি বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনার এলাকায় মিলিত হয়ে সমাবেশ করেন।
বক্তব্য রাখেন তরুণ নেতা সুজন কুমার, নায়েক রায় নিলয়, রতন কুমার রায়, সাংবাদিক কল্লোল রায়, পিজুষ কুমার রায়, সুজন কুমার রায়, নিতাই কার্জ্জি, পূর্ণ চন্দ্র রায়, জনাধন সরকার শুভ।
এ সময় হিন্দু নেতারা ১৯৭১ সালে তাদের ধর্মের মানুষজনের ওপর হামলার ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে অবিলম্বে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানান।
সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এনে দ্রুত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে নীলফামারীতেও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা সদরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা বয়সি প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোর ও যুবক শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে মানববন্ধনে মিলিত হন।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে দুপুর ১২টার দিকে সেখান থেকে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট নীলফামারী জেলা শাখার ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমাবেশে মিলিত হয়।
জাতীয় হিন্দু মহাজোট জেলা শাখার সভাপতি জুয়েল রায়ের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিপুল রায়, সদর উপজেলার সমন্বয়কারী বাসুদেব রায়, সংগলশী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান টিকেন্দ্র নাথ রায় মিরু, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বিশ্বজিৎ রায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী বর্ষা রায়, অরিন্দম রায় নিলয়।
সমাবেশে বক্তারা দাবি করে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, বাড়িঘর, মন্দির ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট হচ্ছে।
সাম্প্রদায়িক শক্তির এমন হামলায় আতঙ্কিত হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন তাদের পরিবার নিয়ে চমর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
দেশে নিরাপত্তা না থাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অবস্থান নিয়েছে ভারতীয় সীমান্তে।
তারা আরো দবি করেন, সারাদেশে প্রায় দেড় কোটি হিন্দু জনগোষ্ঠী রয়েছে।
তারা বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন।
দেশের প্রত্যেকটি আন্দোলন, সবশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েরা স্বতস্ফূর্্ত অংশ নিয়ে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছে। এতো কিছু করার পরও কেন সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হচ্ছে?
দ্রুত এ সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সাম্প্রদায়িক আক্রমণকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা।