গাড়িতে আটটি গুলিসহ একটি টিভি চ্যানেলের স্টিকার, পুলিশের ছাতা, পরিচয়পত্রসহ কিছু সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।
Published : 13 Aug 2024, 01:41 AM
গাজীপুরে গভীর রাতে ডাকাত ভেবে ফাঁকা গুলি ছুড়ে গাড়ি ফেলে পালান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, মো. সাইফুল ইসলাম নামের ওই পুলিশ কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে ঢাকায় কর্মরত।
মাহবুব আলম বলেন, “সাইফুল ইসলাম ময়মনসিংহ এলাকা থেকে রোববার গভীর রাতে নিজের গাড়িতে করে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন।
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্বরত শিক্ষার্থীরা জানান, ওই কর্মকর্তার গাড়ি থামাতে গিয়ে তাদের তিনজন আহত হয়েছেন।
তারা হলেন- গাজীপুর রয়েল নার্সিং কলেজের ছাত্র মাজেদুর রহমান ওরফে রুদ্র (২৪), সীমান্ত (২২) ও বাইকচালক মোজাম্মেল হক (৪৫)।
আহত শিক্ষার্থী রুদ্র বলেন, ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনের সময় রোববার গভীর রাতে (রাত ৩টার দিকে) একটি গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে যাওয়ার সময় গতি রোধ করতে চান শিক্ষার্থীরা।
এ সময় চালকের আসনে থাকা ওই ব্যক্তি গাড়ি না থামিয়ে দ্রুত চলে যান। অন্য শিক্ষার্থীরা তখন ভাড়ায় চালিত একটি বাইক নিয়ে গাড়িটিকে ধাওয়া দিয়ে মহানগরীর তারগাছ এলাকায় গিয়ে আটকায়। তখন চালক বাইকটিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এসময় গাড়ির ধাক্কায় বাইক থেকে পড়ে গিয়ে তিনজন আহত হন।
পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের এলাকায় পাহারার দায়িত্বে থাকা লোকজন গাড়িটিকে আটক করে।
পরে চালকের আসনে থাকা ব্যক্তি কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। এসময় একটি গুলি রুদ্রর বুকের চামড়া ঘেষে চলে যায়।
সাইফুল ইসলাম বলেন, রোববার সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা এলাকায় তার শ্বশুরের জানাজায় অংশ নিয়ে ঢাকায় তার কর্মস্থলে ফিরছিলেন।
তার দাবি, ফেরার সময় রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় কয়েকজন যুবক গাড়ির গতিরোধ করেন।
এ সময় যুবকরা তার গাড়ির কাগজ দেখতে চাইলে তাও দেখান। তারপরও তল্লাশি করার কথা বলে তারা তাকে গাড়ি থেকে নামতে বলেন। তখন তিনি একজনের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখতে পান। এত রাতে শিক্ষার্থীর পরিচয়ে ডাকাতির চেষ্টা করা হচ্ছে ভেবে তিনি গাড়ি না থামিয়ে ঢাকার উদ্দেশে দ্রুত ওই এলাকা ত্যাগ করে যান।
পরে গাজীপুর মহানগরীর বড়বাড়ি এলাকা পর্যন্ত গেলে দুটি বাইক তার গাড়ির গতিরোধের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে গাড়ির পেছনের গ্লাসে আঘাত করে। এ সময় তিনি দ্রুত গাড়ি চালানোর চেষ্টা করলে ধারালো কিছু দিয়ে চাকায় আঘাত করে।
এতে তার গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে সামনে থাকা বাইকে ধাক্কা লাগে।
এ অবস্থায় তার সঙ্গে থাকা পিস্তল দিয়ে একটি ফাঁকা গুলি করেন; গাড়িটি রাস্তায় রেখে পাশে এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আত্মরক্ষা করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে।
তার গাড়িতে আটটি গুলিসহ এনটিভির স্টিকার, পুলিশের ছাতা, পরিচয়পত্রসহ কিছু সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।
গাড়িতে এনটিভির স্টিকার ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, “সম্প্রতি পুলিশের প্রতি জনরোষ ঠেকাতে তথা আত্মরক্ষার জন্য গাড়িতে এনটিভির স্টিকার ব্যবহার করা হয়েছে।”
মহানগর পুলিশের কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, “শুনেছি, এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। রাত ১১টার পর কোনো শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান করে না বলে জানতে পেরেছি। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি তারা শিক্ষার্থী ছিলেন কিনা। ঘটনার তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে গাড়ির চাপ বেশি থাকলে শিক্ষার্থীরা গভীর রাত পর্যন্তও রাস্তায় থাকেন বলে জানান আহত রুদ্র।