হলদিয়া হাট সেতুতে এ দুর্ঘটনায় নিহত ৯জনের মধ্যে সাতজন একই পরিবারের।
Published : 22 Jun 2024, 10:11 PM
বিয়ে হয়েছে মাত্র একদিন আগে। শনিবার দুপুরে বরের বাসায় শতাধিক স্বজন নিয়ে ছিল বৌভাতের অনুষ্ঠান। কিন্তু সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে কনের ৯ স্বজনের মৃত্যুতে সেই অনুষ্ঠানে উঠেছে শোকের মাতম।
শনিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া হাট সেতুতে এ দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে সাতজন একই পরিবারের। তাদের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন গ্রামে।
তারা হলেন, কনের মামা আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী মুন্নি বেগম (৪০), তাদের মেয়ে তাহিয়া (৭), তাসদিয়া (১১), কনের খালা ও ফকরুল আহমেদের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৫৫), কনের খালাতো ভাই সোহেল খানের স্ত্রী রাইতি বেগম (৩০), সোহেল খানের শাশুড়ি ও রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রুমি বেগম (৪০) এবং তাদের স্বজন বাবুল মাতুব্বরের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার (৪০)।
এছাড়াও মারা গেছেন, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া ও তাদের মেয়ে হৃদি (৫)।
আমতলীর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান জানান, আমতলী কাউনিয়া ইব্রাহিম অ্যাকাডেমির শিক্ষক মাওলানা মনিরুল ইসলামের মেয়ে হুমায়রা আক্তারের সঙ্গে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সেলিমের ছেলে সাইমুন রহমান সোহাগের বৃহস্পতিবার বিয়ে হয়।
শনিবার দুপুরে ছিল ছেলের বাড়িতে বৌভাত অনুষ্ঠান। সে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মাইক্রোবাস নিয়ে কয়েকজন স্বজন বেলা দেড়টার দিকে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রাম থেকে বরের বাড়ি আমতলী পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডে রওনা হন।
মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চার জন যাত্রী নিয়ে আরেকটি ইজিবাইক ছিল। পথে দুপুর পৌনে ২টার দিকে দুটি গাড়ি হলদিয়া হাট ব্রিজটি পার হতে গিয়ে ভেঙে নিচে পড়ে যায়।
ইজিবাইকের যাত্রীরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের ৯জন মারা গেছেন। জীবিত উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা হচ্ছেন- মাহাবুব খান, সোহেল খান, সুমা আক্তার ও দীশা আক্তার।
দুর্ঘটনার পর খাল থেকে উদ্ধার হওয়া সোহেল খান বলেন, শুক্রবার তারা মাইক্রোবাস নিয়ে হুমায়রা আক্তারের বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। আনন্দে-উৎসবে শুক্রবার বরের কাছে কনে তুলে দিয়েছেন।
শনিবার তারা ১৪ জন মাইক্রোবাসে বরের বাড়িতে বৌভাতের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। পথে হলদিয়া হাট সেতু পার সময় সেটি ভেঙে মাইক্রোবাস এবং আরও ৪ জন যাত্রীসহ ইজিবাইক খালে পড়ে ডুবে যায়।
“এর পর আর কিছুই বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। আল্লায় মোগো বাচাইলেও সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে।”
এদিকে স্বজনদের মৃত্যুর খবরে পণ্ড হয়ে যায় বৌভাতের অনুষ্ঠান। সেখানে তৈরি হয় শোকের আবহ।
আমতলী থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেন তপু জানান, নিহতদের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ছোট সাইনবোর্ডে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের সতর্কতা
আমতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, হলদিয়া হাট সেতুটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সেতুতে ওঠার আগে খেজুর গাছে ঝুলানো আছে একটি ছোট সাইনবোর্ড। তাতে লিখা- ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ।” এলজিইডির বরগুনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর আদেশের এই সাইনবোর্ড ছাড়া আর কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা দেখা যায়নি সেতুটিতে।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, হলদিয়া বাজার সংলগ্ন খালের উপর ২০০৭-২০০৮ সালে ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেতুটি করা হয়। নির্মাণের পর কোনো সংস্কার না করায় সেতুটি জরাজীর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। লোহার এ্যাঙ্গেল এবং সিমেন্টের ঢালাই খুলে পড়েছে। স্থানীয়রা জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকম চলাচল করলেও এলজিইডি কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, ব্রিজ নির্মাণে যদি কারও গাফিলতি থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।