এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।
Published : 17 Jul 2024, 11:33 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পাঁচ দফা দাবির মুখে প্রায় সাত ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে মুক্ত হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শেষে প্রশাসনের সহায়তায় অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ প্রশাসনের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তারা।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর অর্ধশতাধিক কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বেলা পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে পাঁচ দফা দাবি জানায় আন্দোলনকারীরা এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবন গেইটে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে।
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে ছিল- ১. ক্যাম্পাসে আজীবন সবধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চাই। লিখিতভাবে বুধবার ২টার মধ্যে প্রভোস্ট স্যারদের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। ক্যাম্পাসে কোনো সন্ত্রাসী যাতে ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্টকে পদত্যাগ করতে হবে। ২. বেলা ২টার মধ্যে হল ভ্যাকেন্সি এবং ক্যাম্পাস ছুটির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। মেস মালিকদের চিঠি দিয়ে মেসগুলো খোলা রাখতে হবে। হলের সিট ফাঁকা থাকা সাপেক্ষ প্রভোস্ট বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিট বরাদ্দ দেবেন। ৩. চলমান আন্দোলন নিয়ে যাতে কোনো মামলা না হয়-তা নিশ্চিত করতে হবে। আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৪. বুধবার দুপুর ১টার মধ্যে প্রশাসনিকভাবে মিডিয়ার উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে কাম্পাসকে নিরস্ত্রমুক্ত করতে হবে।
৫. ছাত্রলীগের দখল করা রুমগুলোকে গণরুমে পরিণত করতে হবে।
এসব দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দুপুর ২টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনা শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানান। এতে তাদের একটি দাবিও মানা হয়নি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করে উপাচার্যসহ অন্যদের প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পাশাপাশি নতুন করে ৪টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
বিকাল সাড়ে ৪টায় আন্দোলনকারীদের প্রায় ১০ জন প্রতিনিধি ও ছয়জন সাংবাদিক প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে আলোচনায় আশ্বস্ত হতে পারেননি শিক্ষার্থীরা।
ফলে যতক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দাবি মানা হবে না, ততক্ষণ শিক্ষকদের অবরোধ করে রাখা হবে বলে জানায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে তারা অবরুদ্ধ ছিলেন।
এদিকে উপাচার্য মুক্ত হওয়ার পর আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। পুরো ক্যাম্পাসই মোটামুটি ফাঁকা হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা রাজশাহী শহরের আত্মীয়-স্বজনদের বাসা, বন্ধুদের মেস কিংবা আশপাশের জেলার বাড়িতে চলে গেছে।
এদিকে উপাচার্যকে মুক্ত করার ঘটনায় বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে র্যাব।
সেখানে বলা হয়েছে, রাজশাহীর উপাচার্যসহ ৩৫ জনকে অ্যাডমিন ব্লকে অবরুদ্ধ করে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয় আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যা ৭টার সময় র্যাব-পুলিশ-বিজিবি যৌথ অভিযান পরিচালনা করে।
৪৫ মিনিটের সমন্বিত এই অভিযানে আউটার সার্কেলে পুলিশ টিয়ার সেল এবং ফাঁকা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
র্যাব-বিজিবির মূল দল অ্যাডমিন বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করে এবং উপাচার্যসহ ৩৫ জন ফ্যাকাল্টিকে নিরাপদে বের করে তাদের বাসভবনে পৌঁছে দেয়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাবের মোতায়েন জোরদার করা হয়েছে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হল না ছাড়তে মাইকিং, প্রশাসন ভবন ঘেরাও
রাবির হলে ছাত্রলীগের কক্ষে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পর থমথমে ক্যাম্পাস
রাবি ছাত্রলীগকে অবাঞ্চিত ঘোষণাসহ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধে
সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ