এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৮০ হাজার টন হলেও চাষিরা আশা করছেন লক্ষাধিক টন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনের।
Published : 03 Nov 2023, 12:37 PM
চলতি রবি মৌসুমে ফরিদপুরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ জমিতে এর মধ্যেই চাষাবাদ শেষ করেছেন চাষিরা। তবে তারা চান লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে, তাই নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
চাষিরা জানান, বর্তমানে বাজারের পেঁয়াজের দর বেশি থাকায় তারা চাহিদার থেকে বেশি পরিমাণ জমিতে এবার শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছেন।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকতা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, শীতকালীন সময়ে দেশে শুধু ফরিদপুর অঞ্চলেই মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়ে থাকে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে চাষীরা মুড়িকাটা ভাল্ব সংগ্রহ করে ক্ষেতে রোপণের কাজ শুরু করেন।
আবহাওয়া উপযোগী থাকলে রোপণের ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে ক্ষেত থেকে ফসল ঘরে তুলতে পারেন তারা। সেই হিসাব মতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই চাষীরা তাদের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে তুলতে পারবেন।
এতে পেঁয়াজ বাজারের অস্থিরতা কিছুটা স্থিতিশীল হবে বলে আশা করেন এই কর্মকর্তা।
ফরিদপুর অঞ্চলের মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উর্বর। হালি, দানা ও মুড়িকাটা- এই তিন প্রকারের পেঁয়াজ উৎপাদন করেন জেলার চাষিরা।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে জেলায় এ বছর ৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরকারি হিসাবে প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন হবে ১৮ থেকে ২০ টন। ফলে জেলায় এবার উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে লক্ষাধিক টন মুড়িকাটা পেঁয়াজ।
ফরিদপুর সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ও ডিগ্রীরচর ইউনিয়নে কয়েকটি মাঠে সরেজমিনে দেখা যায়, মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করার জন্য চাষিরা ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউ সেচ দিচ্ছেন আবার কেউ প্রস্তুতকৃত জমিতে ভাল্ব (ছোট পেঁয়াজ) রোপণ করছেন।
চাষীরা জানালেন, এ বছর পেঁয়াজের ভাল দর পাওয়ায় রবি মৌসুমে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই তারা মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদের জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করেছেন। সরকারি আবাদের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের ভাল্ব রোপনে দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের অনুকূলে থাকলে এবার ভাল লাভের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তারা।
চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের আক্কাছ মণ্ডল, জব্বার হোসেন, আব্দুল গফুর মোল্লাসহ বেশ কয়েক জন পেঁয়াজ চাষি বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে তাদের ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হবে। কৃষক পর্যায়ে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দর পেলেই খুশি তারা।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে এলেই বাজার দরের অস্থিরতা কমে যাবে বলে মনে করেন ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “জেলার চাষীরা শীতকালীন এই পেঁয়াজ যে পরিমাণ আবাদ করেছেন তাতে লক্ষাধিক টনের বেশি উৎপাদন হবে। দেশের পেঁয়াজের ক্রাইসিস মৌসুমে ফরিদপুরের চাষীদের মুড়িকাটা পেঁয়াজ ভোক্তাদের জন্য অনেকটা সহায়ক হিসাবে ভূমিকা রাখে।”