ছাতকে যুবলীগ নেতা লায়েক হত্যা: বাদী ‘মদতদাতা’ বললেন এমপি মানিককে

লায়েক হত্যা মামলার বাদী আজিজুল ইসলাম সিলেট নগরীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2023, 07:15 PM
Updated : 26 April 2023, 07:15 PM

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি লায়েককে মাদক চোরাচালান চক্রের সদস্যরা হত্যা করেছে এবং স্থানীয় এক সংসদ সদস্য এর মদতদাতা বলে অভিযোগ করেছেন এ হত্যা মামলার বাদী। 

তিনি হত্যাকারীদের মদদদাতা হিসেবে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে দায়ী করেন এবং তার কারণে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। 

মামলার তদন্তে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও সংসদ সদস্য মানিকের ‘অন্যায় ও অযাচিত হস্তক্ষেপ’ বন্ধ করে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন লায়েকের ছোট ভাই মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম।   

লায়েক হত্যা মামলার বাদী আজিজুল ইসলাম বুধবার সিলেট নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। 

তবে এমপি মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, “লায়েক হত্যার প্রকৃত আসামিদের বিচার আমিও চাই। সে আমার কর্মী ছিল। মামলাটির অধিকাংশ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে গোয়েন্দা সংস্থা মামলার তদন্ত করছে।” 

তিনি বলেন, “তবে এ মামলায় কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে; যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত না। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এসব করছে। এর আগেও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল তারা। আমি মনে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।”    

নিহত লায়েকের দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ স্বজনদের উপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্যে আজিজুল ইসলাম বলেন, ছাতক শহরের মন্ডলীভোগের বাসিন্দা যুবলীগ নেতা লায়েক মিয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। এ কারণে মাদক সিন্ডিকেট ও চোরাচালানের হোতা স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর তাপস চৌধুরী, তার ঘনিষ্টজন আব্দুল কুদ্দুছ শিপলু, এমপি মানিকের ভাতিজা ইশতিয়াক রহমান তানভির, সাদমান মাহমুদ সানি ও আলা উদ্দিনদের সঙ্গে লায়েকের বিরোধ দেখা দেয়। 

“স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ এবং মাদক ও চোরাচালানসহ নানা অপরাধমূলক কাজে বাধা দেওয়ার কারণে গত ২৮ মার্চ থানার পার্শ্ববর্তী গণেশপুর গোদারাঘাটে সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে।” 

আজিজুল বলেন, হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন দিয়েছেন এমপি মানিক। ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের অনেকে এমপির বাসায় আশ্রয় নেয় এবং অনেকে বিভিন্ন স্থান দিয়ে পালিয়ে যান। হত্যাকাণ্ডের পর ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ দিলে পুলিশ মামলা নিতে টালাবাহানা শুরু করে। 

“এমপি মানিকের মদদে পুলিশ মামলা নিতে কালক্ষেপণ এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করে।” 

আজিজুল বলেন, মামলা করতে কালক্ষেপণ করলে এলাকার লোকজন ৩১ মার্চ মানববন্ধনে ঘোষণা দেন। ছাতক থানা পুলিশ পরদিন মামলা রেকর্ড করে। এতে প্রধান আসামি করা হয় আব্দুল কুদ্দুস শিপলুকে। অন্য আসামিদের মধ্যে ছাতক পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাপস চৌধুরী, এমপি মানিকের ভাতিজা ইশতিয়াক রহমান তানভির, বাগবাড়ীর সাদমান মাহমুদ সানি, কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তিরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা, আলা উদ্দিন ছাড়াও রয়েছেন মন্ডলীভোগের আবুল খয়ের টুটুল, তাজ উদ্দিন, মিজান মিয়া, সাব্বির, বাশখালা গ্রামের আব্দুল মতিন, মন্ডলীভোগ এলাকার বাবলু, মঞ্জু, শামসুল ইসলাম, সায়মন, মিলন মিয়া, মহসিন, সৌরভ ও এরশাদ আলী।

আজিজুল বলেন, ২০২১ সালের ৪ জুলাই ছাতকে নৌ-পুলিশের উপর হামলা হয়। এতে ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় র‌্যাব-৯ ঢাকা থেকে তাপস, সানি ও আলা উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। ২০১৯ সালের ১৫ মে পুলিশের উপর গুলিবর্ষণ করলে তৎকালীন ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। সর্বশেষ গত ৫ ফেব্রুয়ারি তার ভাই এখলাছ মিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়। 

সেই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে গত ২৮ মার্চ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা লায়েককে খুন করে বলে আজিজুলের অভিযোগ। 

আজিজুল অভিযোগ করেন, ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়া নাটক সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আসামি ও তাদের পক্ষের লোকজন নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এক ভাইকে তারা মেরেছে প্রয়োজনে আরেক ভাইকে তারা মেরে ফেলবে–এমন কথাও বলে বেড়াচ্ছে।