“বর্তমানে ১২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতেও আমাদের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ঋণের টাকা পরিশোধ করতে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছি।”
Published : 28 Mar 2025, 12:33 PM
মাদারীপুরের ডাসারের ফজল হাওলাদার এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের আলু চাষ করেছিলেন; সেজন্য ঋণ করতে হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। কিন্তু আলু তোলার পর যে দাম পাচ্ছেন তাতে লাভ তো দূরে থাক খরচের টাকা তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের কর্ণপাড়া গ্রামের এই চাষি বলেন, “বর্তমানে ১২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতেও আমাদের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ঋণের টাকা পরিশোধ করতে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছি। তাতেও ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।”
শুধু ফজল হাওলাদারই নন। আলু চাষ করে একই ধরনের বিপাকে পড়েছেন একই ইউনিয়নের কলিম খান ও মোহাম্মদ ইব্রাহিমসহ অন্য আলু চাষীরা।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এখন আলু মজুদ করে রাখলে পরে বাজারে লাভজনক দামে বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা।
তবে চাষিরা বলছেন ঋণ পরিশোধের চাপে বাধ্য হয়েই কম দামে জমি থেকেই আলু বিক্রি করছেন তারা। এছাড়া হিমাগারে আলু সংরক্ষণেও এবার খরচ বেড়েছে। তাই আলু বিক্রি করা ছাড়া তাদের গতি নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠ থেকে কৃষকরা এখন আলু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত। মাঠ থেকেই সে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন আড়তদাররা।
মাঠেই কথা হয় ফজল হাওলাদারের সঙ্গে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আলু চাষের খরচ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার বেশি হয়েছে। প্রতিটি জমিতে পাঁচ থেকে সাতটি করে বদলা খাটাতে হয়েছে। এতে আমার ৫ বিঘা জমিতে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
“এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখই ঋণ করা টাকা। তাই বাজারে নতুন আলুর দাম কম হলেও লোকসান গুনেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।”
আরেক আলু চাষি কলিম খান বলেন, “আমি এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে গোল আলু চাষ করেছি। গত এক সপ্তাহ ধরে জমি থেকে আলু তুলছি। কিন্তু পাইকারি বাজারে আলুর দাম কেজি প্রতি ১২ টাকাও দিতে চাচ্ছে না।”
আলু চাষ করতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণ নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন ঋণ পরিশোধের চাপে আছি। তাছাড়া হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করব, সেখানেও খরচ বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়েই কম দামে জমি থেকেই আলু আড়তে বিক্রি করে দিচ্ছি।”
শুধু এ ইউনিয়নের চাষিরা নন, একই চিত্র পুরো মাদারীপুর সদর, ডাসার, কালকিনি, রাজৈর ও শিবচর উপজেলার আলু চাষীদের। লোকসানের বোঝা বেড়ে যাওয়ায় আগামীতে আলু চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন অনেকেই।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। যার থেকে ৭৪ হাজার ৯৮০ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, “এ জেলায় আলুর চাষ খুব বেশি হয় না। তবে কৃষি বিভাগের উৎসাহ ও পরামর্শে অনেক চাষিই মাদারীপুরে আলু চাষে শুরু করছেন।”
আলু সংরক্ষণ করে বাজারে ভালো দাম উঠলে বিক্রির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এবার আলুর উৎপাদনও ভালো হয়েছে। তবে ভালো দাম পেতে হলে কৃষকদের আলু কয়েক মাস সংরক্ষণ করার পরে বাজারে বিক্রি করলে লোকসান হবে না।”
মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্সের সদস্য বেলাল হাওলাদার বলেন, “মাঠ পর্যায়ে আলুর দাম শুরুতেই যদি বিশ টাকা কেজি পাওয়া যেত তাহলে ঋণের বোঝা সরাতে কৃষকদের বেগ পেতে হত না। সরকারের এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত হবে, যাতে কোনোভাবেই যেন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”