এ কারণে চাকরি বা উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে পারছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকেরা। ল্যাব বন্ধ থাকায় গবেষণাকর্ম চালাতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।
Published : 10 Jul 2024, 11:14 PM
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। একই অবস্থা বিরাজ করছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও।
এতে চাকরি বা উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে পারছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকেরা। ল্যাব বন্ধ থাকায় গবেষণাকর্ম চালাতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, দৈনিক শতাধিক শিক্ষার্থী সেবা নেন এ দপ্তর থেকে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীরা সেবা পাচ্ছেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদপত্র উত্তোলনে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। কর্মবিরতির কারণে অনুমোদন পদ্ধতিও বন্ধ রয়েছে। সমিতির ডাকে সব কর্মকর্তা কর্মবিরতি পালন করছেন।
দুই দিন দুপুর ১২টা ও দুপুর আড়াইটায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর দেখা মেলে। তাদের ট্রান্সক্রিপ্ট গ্রহণের তারিখ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীরা তা তুলতে পারছেন না। তবে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরে গেলে দুজন কর্মকর্তা জানান, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সেবা চালু আছে। বাকি সব সেবা বন্ধ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান বলেন, “রেজিস্ট্রার দপ্তরের সব কাজই বন্ধ রয়েছে। সব কর্মকর্তাই কর্মবিরতি পালন করছেন।”
দশম দিনের মত সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “জ্ঞান-বিজ্ঞানে বাংলাদেশের উন্নয়নে যারা ভূমিকা পালন করছেন তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। যদি শিক্ষকদের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়, তাহলে তারা কীভাবে জাতির মেরুদণ্ড তৈরি করবেন?”
তাই দাবি মেনে নিয়ে তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এই শিক্ষক নেতা।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালেয়েও চলছে শিক্ষকদের কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়টি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক এম এম মাহবুব আলম বলেন, “সর্বাত্মক কর্মসূচির কারণে ১০ দিন ধরেই বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু। শুধু জরুরি সেবা চালু রয়েছে।
“অন্যদিকে, চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এছাড়া প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার রুটিনও আটকে আছে।”
তিনি বলেন, “আন্দোলনের কারণে ঈদের ছুটিতে যাওয়া অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে এখনও আসেনি। তাই ক্যাম্পাস প্রায় শিক্ষার্থী শূন্য।”
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ছফি উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, “প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার আন্দোলন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আত্মমর্যাদার লড়াই। তাই যে কোনো মূল্যে শিক্ষকরা দাবি আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবেন। আমাদের মূল দাবি হল- উচ্চতর স্বতন্ত্র বেতনস্কেল বাস্তবায়ন।“
তার ভাষ্য, “পৃথিবীর সব দেশে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, একমাত্র বাংলাদেশে শিক্ষকরা এ বিষয়ে চরম অবহেলিত। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নিম্নতর বেতন স্কেল বাংলাদেশের শিক্ষকদের।”
১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সর্বজনীন পেনশন বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এ সময় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা এই নতুন পেনশন স্কিমের আওতায় আসবেন।
এর আগে চলতি বছরের ১৩ মার্চ সরকারের অর্থ বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারি করে। তখন থেকেই সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। দাবি আদায়ে সংগঠনটির ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লাগাতার আন্দোলন করছেন। এ কারণে ১০ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্লাস, পরীক্ষা, গবেষণাসহ সবকিছুতেই অচলাবস্থা বিরাজ করছে।