নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে সূর্যমুখীর বীজ বপন করা হয়। এরপর ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়।
Published : 19 Jan 2024, 02:43 PM
‘অল্প খরচে বেশি লাভ’ হওয়ায় ফরিদপুরে দিন দিন সূর্যমুখী ফুলের চাষ বাড়ছে। জেলার বিএডিসির-বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “বৈচিত্র্যময় কৃষির জেলা ফরিদপুরে প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। সে কারণেই জেলায় ‘অধিক পুষ্টিগুণ’ সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু হয়েছে।
“কোলেস্টেরল মুক্ত ও প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় মানুষের শরীরের দুর্বলতা কমাতে এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য। যে কোনো তেলের চাইতে এর তেল ‘দশগুণ’ বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। জেলার সূর্যমুখী চাষ বাড়ার এটাও একটা কারণ।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে সূর্যমুখীর বীজ বপন করা হয়। এরপর ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে।
প্রতি একর জমিতে খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
ফরিদপুর শহর তলীর বদরপুর এলাকায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে তিন একর জায়গায় বপন করা হয়েছে বারি সূর্যমুখী-২ জাতের ফুলের বীজ।
ডিসেম্বরের শেষ থেকে সেখানে প্রতিটি গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেল, সেখানে হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুলের সমাহার; যেন হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। শীতের হিমবাতাসের দোল খেয়ে সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে তার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। আর সূর্যমুখীর সোনালী রুপ দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত আসছেন প্রকৃতি প্রেমিরা।
বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সূর্যমুখীর ফুল বাগানে ঘুরছেন; স্মৃতি ধরে রাখতে কেউ কেউ মুহূর্ত বন্দি করছেন ক্যামেরায়।
এছাড়া জেলার নয়টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন প্রায় দুই শতাধিক কৃষক। সেসব মাঠ জুড়ে এখন কেবল হলুদের সমারহ। সূর্যমুখীর হাসি দেখে কৃষকেরাও ভাল ফলনের আশা করছেন।
গঙ্গাবন্দি এলাকার চাষি গিয়াস উদ্দিন জানান, সূর্যমুখীর চাষে হেক্টর প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বিপরীতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করা যায়।
তিনি বলেন, “অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম এবং অধিক লাভ হওয়ার কারণে এই ফুলের চাষ করেছি। আর যারা আমার ফুল দেখতে আসছেন, তাদের অনেকেই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।”
শহরতলীর হারকিান্দি এলাকার চাষি হুমায়ুন ভুইয়া বলেন, “অনাবাদি জমিতেও এর চাষ করা যায়। অন্য যেকোনো ফসেলের তুলনের উৎপাদনেও খরচ অনেক কম।”
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, “দুইশ থেকে আড়াই’শ চাষি গত কয়েক বছর ধরে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করছে। তাদের দেখাদেখি আরও অনেকেই ঝুঁকছে।
“অন্য ফসলের চেয়ে এর জীবনকাল স্বল্প ও লাভজনক। সে কারণে সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।”
এ ছাড়া সূর্যমুখী তেলে কোনো কোলেস্টেরল নেই এবং স্বাস্থ্য গুণ অনেক বলে ভোক্তাদের কাছেও দিন দিন চাহিদা বাড়ছে বলে জানান রফিকুল।