নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া ওসমানী হাসপাতালের ভবন নির্মাণ চলছে

দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী কাজে থাকা শ্রমিকদের হেলমেট, কোমরে বেল্ট, বুট জুতা ব্যবহার করতে হবে।

বাপ্পা মৈত্রসিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2023, 04:08 PM
Updated : 27 March 2023, 04:08 PM

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক নিহত হওয়ার পরও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে।

১৫ তলা এই ভবনের চলমান নির্মাণ কাজে থাকা শ্রমিক ও পথচারীদের জন্য এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।  

সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ১৫তলা ক্যান্সার ভবনের চতুর্থ তলার ছাদ ঢালাই কাজ চলছে। অনেক শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন।

তবে কারো মাথায় হেলমেট, পায়ে গাম বুট কিংবা কোমরে সেইফটি বেল্ট নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা।

শুধু ভবনের চার পাশে টিন দিয়ে একটি দেওয়াল নির্মাণ করেছে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ।

গত ১৯ মার্চ নির্মাণাধীন এই ভবনের তৃতীয় তলা থেকে পড়ে জুরান মিয়া নামের এক শ্রমিক মারা যান। তারপরও নিরাপত্তার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠাটি।  

সিলেট গণপূর্ত বিভাগ জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালায়ের উদ্যোগে ৮৯ কোটি ৫৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৬৮ টাকা ব্যয়ে বেসমেন্টসহ ১৭তলা ক্যান্সার ভবনের কাজ চলমান রয়েছে।

এ প্রকল্পের কাজ পেয়েছে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম জামাল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড।

দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, শ্রমিকের কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। আর শ্রমিকদের নিরাপত্তাসহ প্রকল্পের যাবতীয় কাজ তদারকি করবে গণপূর্ত বিভাগ।

এ বিষয়ে জানাতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা সাইট প্রকৌশলী নিজের পরিচয় না দিয়ে বলেন, “সকল ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই শ্রমিকরা কাজ করছেন।”

এ সময় পাশে থাকা রবিউল ইসলাম নামে একজন প্রতিবেদকের কাছে প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখতে চান। কীভাবে এবং কার অনুমতিতে সাইটের ভেতরে ঢোকা হয়েছে তা জিজ্ঞাসা করেন।

তখন নিহত শ্রমিক জুরান মিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, এখন রমজান চলছে, পরে তার পরিবারের লোকজন আসবেন। তারপর আলোচনা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে নির্মাণ কাজ শুরুর দাবি জানিয়ে মেডিকেল রোডের বাসিন্দা শিপন মিয়া বলেন, “যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। উপর থেকে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র মাথায় পড়ে মৃত্যুও হতে পারে।

“কিছুদিন আগে এক শ্রমিক পড়ে মারাও গেছেন। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে চলতে হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে এ রাস্তা দিয়ে। এভাবে কাজ কার ঠিক নয়।”

মেডিকেল রোডের ব্যবসায়ী আমির চৌধুরী বলেন, “এ সড়ক দিয়ে অনেক গাড়ি ও মানুষজন চলাচল করেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দ্রুত নিরাপত্তা বেষ্টনি দেওয়া দরকার।”

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্মাণাধীন ক্যান্সার বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তা বেষ্টনি দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত বিভাগকে জানিয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার কারার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে দু-একদিনের মধ্যে চিঠিও দেওয়া হবে।

“একজন শ্রমিক মৃত্যুর পরই আমরা তাদের বলেছি দ্রুত নিরাপত্তা বেষ্টনি দিতে; না হলে কাজ বন্ধ রাখতে চিঠি দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে।”

সরকারি প্রকল্প দেখতে যেতে কারো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানান সিলেট গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায়।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শ্রমিকের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই ভবনের কাজ করতে হবে। শর্ত অনুযায়ী কাজে থাকা শ্রমিকদের হেলমেট, কোমরে বেল্ট, বুট জুতা ব্যবহার করতে হবে। আর চতুর্থ তলার ছাদ হওয়ার পর নিরাপত্তা বেষ্টনি ব্যবহার করে কাজ করার কথা উল্লেখ আছে।”

তিনি আরও বলেন, “কিছুদিন আগে একজন শ্রমিক মারা গেছেন। তার মাথায় হেলমেট, কোমরে বেল্ট ও পায়ে জুতা ছিল না। এগুলো থাকলে হয়তো তার মৃত্যু হতো না। ওই শ্রমিক তৃতীয় তলার সাটারিং খোলার কাজ করতে গেয়ে নিচে পড়ে যান।”

আরও পড়ুন

Also Read: ওসমানী হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু