“পাহাড়ে অন্য জনগোষ্ঠীর মাঝে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকলেও খেয়াংদের মধ্যে তা দেখা যায়। তবে নারীরা সেসব বেড়াজাল থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে।”
Published : 08 Mar 2024, 12:32 AM
মেঘ পাহাড়ের মিতালি কিংবা ঝরনা, ঝিরিপথ- প্রকৃতির সবই আছে সেখানে, কেবল চলার জন্য অর্থকড়িই নেই।
সেই পাহাড়ি জীবনে ২০১০ সালে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পেরেছিলেন অংক্রাচিং খেয়াং; অভাবী পরিবার যে আর খরচ কুলিয়ে উঠতে পারছিল না। মা-বাবা নিজেদের সামান্য জমিতে কাজ করে কিংবা কখনও ক্ষেতখামারে মজুরি খেটে ক' টাকাই আর রোজগার করেন!
অংক্রাচিংরা চার ভাই-বোন, খেয়ে না খেয়েই দিন কাটছিল। এরইমধ্যে গেল বছর বাবা প্রয়াত হয়েছেন। এসব বলতেই গলা ধরে আসছিল অংক্রাচিংয়ের।
৩২ বছর বয়সী ওই নারীর চোখের জল গড়াতেই সহমর্মিতা জানিয়ে এগিয়ে এলেন আরেক খেয়াং নারী।
তিনি জানালেন, উপার্জনের জন্য অংক্রাচিং কিছুদিন ধরে একটি সমিতিতে তাঁতের সুতা টানার কাজ করছেন। মাস শেষে তাকে চার হাজার টাকা দেওয়া হয়। সুতা টানার কাজ করতে হয় সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত। কাপড় বুনতে শিখলে তখন তার বেতন বাড়বে। এর বাইরে সমিতির তরফে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে।
এরইমধ্যে আবেগ সামলে অংক্রাচিং কথা বলতে থাকলেন। জানালেন, তার বোন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে, যার ভর্তির সময় ওই সমিতি থেকে সহায়তা মিলেছিল। এক ছোট ভাই এলাকার চিমিডলু উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে।
আরেক ভাই টাকার অভাবে পড়তে পারেননি। ঘরে গৃহস্থালির কাজ সামলানো ও ক্ষেতখামারে মাকে সহযোগিতা করে থাকেন। সুতা টানার কাজ করে যে আয় হয়, সেই টাকায় অংক্রাচিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বোন আর স্কুলপড়ুয়া ছোট ভাইকে সহযোগিতা করে থাকেন।
বিপদের আশ্রয় খেয়াং নারী উন্নয়ন সংস্থা
কেবল অংক্রাচিং নয়; তার মত অনেক অসহায় নারী, বিধবা ও বেকার নারীদের আয়ের পথ খুলে দিয়েছে ‘গুংগুরু পাড়া উপজাতীয় মহিলা উন্নয়ন সংস্থা’। সেখানে কাজ করে সংসার সামলাচ্ছেন অনেকেই। সন্তান-সন্ততিদের লেখাপড়ার খরচ জোগান দিয়ে যাচ্ছেন।
তবে সমিতির কাজে যুক্ত হওয়া অতটা সহজ নয়। পাড়ার মানুষের নানা কটূক্তি তো আছেই, সঙ্গে সাংসারিক কাজকর্মও তো সামলাতে হয়।
বান্দরবান সদর উপজেলা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে গুংগুরু পাড়া। সেখানে খেয়াং জনগোষ্ঠীর ৩০০টি পরিবার রয়েছে। ১৯৯৯ সালে কয়েকজন খেয়াং নারীর উদ্যোগে গড়ে ওঠে এ সমিতি।
দুই যুগ আগে গঠন করা হলেও সমিতির কার্যক্রম শুরু হয় মূলত ২০১০ সালে। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে এমন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়, যাতে সদস্যরা সেখান থেকে আয় করতে পারেন। এ সমিতিতে বর্তমানে ৮০ জন সদস্য আছেন, যারা খেয়াং জনগোষ্ঠীর নারী। তাদের মধ্যে ১১ জনকে নিয়ে একটি কমিটি আছে, যারা যে কোনো বিষয়ে সবার মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
সংগঠনটির উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে তাঁত বুনন, মোমবাতি তৈরি, গবাদিপশু পালন, আদা-হলুদ চাষ। তাদের তৈরি কাপড়ের মধ্যে রয়েছে ফতুয়া, গামছা, থামি, মেয়েদের ফ্রক ও কম্বল।
সমিতির তরফে নারীদের স্বাবলম্বী করতে যেমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে, তেমনই অসচ্ছল পরিবারে শিশুদের লেখাপড়ার ব্যয়ে সহযোগিতাও করা হয়। এর বাইরে দুটি বেসরকারি স্কুলও পরিচালনা করছে সংগঠনটি।
যেমনটা দেখা গেল
বুধবার গুংগুরু পাড়ার খেয়াং নারী উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, ছাদ ঢালাই করা একটি ভবনের এক কক্ষে ছয়-সাত জন নারী কাপড় বুননে ব্যস্ত। কেউ চরকি থেকে সুতা টানছেন, কেউ এক জায়গায় সুতা জড়ো করছেন। তিনজন বুনছেন কাপড়।
আর কেউ প্রয়োজনের সময় সুতা এনে দিচ্ছেন, কাপড় ভাঁজ করছেন। আরেক কক্ষে মোমবাতি তৈরি করতে দেখা গেল এক নারীকে। পাশের এক বারান্দায় ১৫-১৬ জন নারীর হাতে ‘পাস বই’ দেখা গেল, যেটি দিয়ে তারা মাসিক সঞ্চয় জমা দিচ্ছিলেন।
কাপড় বুননের কারিগর খাইসিংনু জানালেন, তিনি প্রতিদিন সকাল ৭টায় এসে কাজে যোগ দেন। একটা কাপড় তৈরি করতে সকাল ১০টা বেজে যায়। এরপর দুপুর পর্যন্ত আরেকটা। তবে সবকিছু প্রস্তুত থাকলে দুপুর পর্যন্ত তিনটা কাপড় বোনা হয়।
খাইসিংনু বললেন, “কিন্তু সুতার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। সুতা টানতে অনেক সময় লাগে। এভাবে সুতা টানা অবস্থায় মাসে ৮ দিনের মত ঘরে বসে থাকতে হয়। সুতার অভাব রয়েছে। আবার সুতা থাকলেও সুতা টানতে সময় দিতে হয়। দুপুরে পর আর কাজ করা যায় না।
“এরপর ঘরে গিয়ে গৃহস্থালি কাজ করি। মাসে ৮ হাজার টাকা বেতন পাই। বাবা-মা তাদের মত কাজ করে। দুজন বোন কলেজে ও এক ভাই ক্লাস নাইনে পড়ে। তাদের লেখাপড়ার খরচ আমি দিই।”
সুতা টানার কাজ করেন আবুমে খিয়াং। তিনি বললেন, “আগে অন্যদের কাছে কাজ করতাম। নিজের ঘরে সাংসারিক কাজও সামলাতাম। কিন্তু বাইরে কাজ সবসময় পেতাম না। ঘরে একটা ছোট্ট বাচ্চা রয়েছে। স্বামী কখনও কাজ করে, কখনও করে না।
“সকাল হলেই পাড়ার দোকানে গিয়ে আড্ডাবাজি করে সময় কাটায়। ঘরে অভাব ছিল, সংসার চালাতে পারি না। ভালো করে একবেলা ভাতও খেতে পারি না। এখন সমিতির দিদিদের ডাকে এখানে সুতা টানার কাজ করি। তারা একটা কাজ দিয়েছে। এখন মোটামুটি চলতে পারি। এতেই আমি খুব খুশি।”
থুইজ নামে আরেকজন জানালেন, তার ঘরে এক মেয়ে, দুই ছেলে রয়েছে। মা বৃদ্ধ হয়েছে।
খেয়াং জনগোষ্ঠীর এ নারী বললেন, “একটা ভাঙা ঘরে কোনোরকমে থাকি। গত বছর সমিতির পক্ষ থেকে তিন রুমের একটি বেড়া ঘর তৈরি করে দিয়েছে। এতে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গরিব মানুষ; ঠিকমতো খাওয়ার টাকা-পয়সা নাই। এই ঘর পেয়ে খুব খুশি হয়েছি।”
আলাপচারিতায় সমিতির সদস্যরা জানালেন, সবাই যে কাজ জানে, এমন নয়। আবার কাজ করতে জানলেও দক্ষতার অভাব রয়েছে। রয়েছে সাংগঠনিক দুর্বলতাও।
কিন্তু সবারই রয়েছে কাজ করার ‘অদম্য’ ইচ্ছা। কেবল মানসিক শক্তি ও পরিশ্রমের উপর ভর করে সন্তান-সন্ততিদের লেখাপড়া ও সংসার চালানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তারা।
নেপথ্যে এক খেয়াং নারী
সরকারি চাকরি করায় কাগজে-কলমে সমিতির দায়িত্বে নেই পাড়ার স্কুল শিক্ষক হ্লাক্রইপ্রু খেয়াং। কিন্তু তিনিই সবকিছু সামলে সংগঠনকে এগিয়ে নিচ্ছেন। নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন কর্মীদের। অসহায় ও বিপদাপন্ন নারীদের সাহস যোগাচ্ছেন।
সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন হ্লাক্রইপ্রু। সংগঠনের ভবন তৈরি ও নানাভাবে সহযোগিতার জন্য স্মরণ করলেন এক সময়ের জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের কথা।
সংগঠনের কার্যক্রমের নানা দিক তুলে ধরার পাশাপাশি সদস্যদের সংগ্রামের কথাও তুলে ধরলেন হ্লাক্রইপ্রু। তার কথায়, “এই খেয়াং নারীরা একদিকে যেমন প্রান্তিক, অন্যদিকে রয়েছে সাংগঠনিক ও ভাষাগত সীমাবদ্ধতা।”
বান্দরবান ও রাঙামাটি মিলে ৪,৮২৬ জন খেয়াং আছেন জানিয়ে হ্লাক্রইপ্রু বলেন, “এই উন্নয়ন সংস্থা গড়ে তোলা হয়েছে দরিদ্র ও অসহায় খেয়াং নারীদের আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়া সুযোগ হতো আমার। তখন অন্যান্য নারীদের দেখে সবসময় নিজের সম্প্রদায়ের নারীদের অসহায় মুখগুলো ভেসে উঠত।
“তখন থেকে আমি নিজেই নেমে পড়ি। আমাদের নারীদের যদি অর্থনৈতিক আয়ের কাজে যুক্ত করতে পারি, তাহলে অনেক কিছু পরিবর্তন হবে। তবে অনেক ধরনের হয়রানি ও কটূক্তি শুনতে হয়েছে।”
হ্লাক্রইপ্রু বলতে থাকেন, ‘‘আমাদের উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে একটা সিএনজি অটোরিকশা কেনা হয়েছিল। সংস্থার এক সদস্যকে ড্রাইভিং শিখিয়ে তাকে চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আবেগে-উত্তেজনায় আমরা কয়েকজন কেনার প্রথম দিনেই পাড়ার রাস্তা এবং বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে কিছু এলাকায় ওই সিএনজিতে চড়ে বেরিয়েছি।
“কিন্তু পাড়ার কিছু লোকজন বিশেষ করে পুরুষরা ভালোভাবে নেয়নি। সবচেয়ে মন খারাপের ঘটনা ঘটেছে সংস্থার সদস্য ও সিএনজি চালক নারীর। সে ঘরে স্বামীর হাতে মারধরে শিকার হয়েছে। নানাভাবে অপমান, হয়রানি ও হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে তাকে।”
সেই ঘটনা নিয়ে পাড়ায় বিচার বসাতে হয়েছিল জানিয়ে হ্লাক্রইপ্রু বলেন, “কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আর গাড়ি চালাতে পারেনি। পরে আমরা এই সিএনজি বিক্রি করে দিয়েছি।
“বিভিন্ন সময় আরও কতভাবে আমাদের সংস্থার সদস্যদের নিগৃহীত হতে হয়! এক সময় কয়েক দিন পরপর এগুলো নিয়ে সামাজিকভাবে বিচারে বসতে হয়। তার পরও আমরা দমে যাইনি।”
হ্লাক্রইপ্রু খেয়াং বলেন, “আমি যে স্কুল শিক্ষকতা করি, সে স্কুল আমাদের উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে তৈরি করা। পরে সেটি সরকারিকরণ হয়।
“খেয়াং অধ্যুষিত একটু দুর্গম পাড়ায় আরও দুটি স্কুল রয়েছে। একটি স্কুলে চারজন করে শিক্ষক রয়েছে। একজনকে মাসে ৭ হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়া হয়। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো এই স্কুলে।”
সংগঠনের কার্যক্রম চালাতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ার কথা জানালেন হ্লাক্রইপ্রু।
“আমাদের উদ্যোগে আদা-হলুদ চাষ করা হয়েছিল। কিন্তু সে বছর দাম পড়ে যাওয়াই লাভ পাইনি। উল্টো লোকসান গুনতে হয়েছে।”
তিনি বলেন, “কৃষি জমিতে সার, কীটনাশক কেনা, হালচাষের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকি। বিভিন্ন সময় ১৫টি গরুও কিনে দেওয়া হয়েছে। শর্ত ছিল, বিক্রি করে দেওয়ার পর আমাদের মূল টাকাটা ফেরত দিতে হবে।
“একদম বিপদগ্রস্ত; যার কিছু নাই সেসব পরিবারে শিশুদের ভর্তি কিংবা ফরম ফিলাপের টাকাও আমরা দিয়ে থাকি। গত বছর আমাদের সংস্থার টাকায় ১৫টি ঘর সংস্কার করে দেওয়া হয়েছে। সংস্থার খরচে পাঁচটা টিউবওয়েল করে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু চারটি নষ্ট হয়েছে, একটা সচল আছে। সংস্থায় প্রত্যেক সদস্য মাসে ১০০ টাকা করে জমা দেয়।”
খেয়াংদের জন্য পোশাক তৈরি
একসময় এদেশের খেয়াংদের নিজস্ব পোশাক বাজারে ছিল না। সবাই মারমাদের তৈরি থামি পড়ত।
হ্লাক্রইপ্রু বলেন, “আমাদের তাঁতে কাপড় বুননের পর আমাদের নিজস্ব পোশাক তৈরি হয়। এখন আমাদের খেয়াং নারীদের যে পোশাক দেখা যায়, সেটা আমাদের উন্নয়ন সংস্থার বুননের কাপড়। আমাদের সংস্থার নারীদের হাতে এগুলো তৈরি হয়েছে।
“তাঁতের তৈরি করা পোশাকগুলো নিয়ে আমাদের কর্মীরা বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে বিক্রি করে আসে। এছাড়া বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় কোনো মেলা হলে আমরা স্টল দিই। সেখান থেকে বিক্রি করা আয়ের টাকায় আমাদের কর্মীদের বেতন দিয়ে থাকি।”
তবে নিজেদের সাফল্যের পাশাপাশি সীমাবদ্ধতার কথাও উঠে এলো তার কথায়।
“পুঁজির অভাব রয়েছে, সুতা কিনতে পারি না। সুতা না থাকায় মাসে ৮-১০ দিন কর্মীদের বসে থাকতে হয়। আমরা কাজ দিতে পারি না। এ সময় টাকার জন্য জমে থাকা কাপড় পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে বিক্রি করতে পাঠাই। কম দামে বিক্রি করে আসতে হয়, যেহেতু টাকা দরকার আমাদের। সামনে আরও আয়বর্ধকমূলক কার্যক্রম নেওয়া হবে। কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। আরও প্রশিক্ষণ দরকার।”
‘যারা উপকৃত হচ্ছে, তারাই পাশে থাকবে’
গুংগুরু পাড়া উপজাতীয় মহিলা উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি উম্রাচিং খেয়াং বলেন, “আমাদের কাজ নারীদের নিয়েই; তাদেরকে আত্মনির্ভরশীলভাবে হিসেবে গড়ে তোলা। সবার স্বামী ভালো না। ঘরে অনেক ধরনের হয়রানি শিকার হতে হয় খেয়াং নারীদের।
“তাদেরকে এখানে কাজের ব্যবস্থা করি। তারা যেন নিজেরাই কাজ করে ঠিকমতো সংসার চালাতে পারে। যারা একেবারে নতুন, তাদেরকে প্রথমে তিন মাসের মত কাজ শেখানোর ব্যবস্থা করি।”
বান্দরবান জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী বলেন, “পাহাড়ে যেসব নৃতাত্ত্বিক পরিবার রয়েছে, তারা সবাই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুক্ত। কিন্তু খেয়াংদের মধ্যে সে দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়। তবে নারীরা সেসব বেড়াজাল থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে।
“তারা একটা সমতার ভিত্তিতে সমাজে নারী ক্ষমতায়নের জন্য এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ করে আয়বর্ধকমূলক কাজ ও শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে তারা সেটা করে যাচ্ছে। সে প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই।”
আতিয়া চৌধুরী বলেন, গুংগুরু পাড়া উপজাতীয় মহিলা উন্নয়ন সংস্থাটি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে নিবন্ধিত একটি সমিতি। বান্দরবানে যেসব জনগোষ্ঠী রয়েছে, তার মধ্যে তারা খুবই প্রান্তিক ও সংখ্যা কম।
“তাদের নিজস্ব সবকিছু আছে, তবে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। এই সব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।”
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘তাদেরকে আয়বর্ধক ও শিক্ষার উন্নয়ন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। প্রতিবছর নিবন্ধিত সমিতির জন্য সরকারিভাবে যেসব বরাদ্দ আসে, সেগুলো দেওয়া হয়। তাদের কার্যক্রম খুব স্বচ্ছতার সাথে চলছে।
“তাদেরকে বলেছি, সমাজে যেসব বাধা-বিপত্তি রয়েছে, সেগুলো খুব কৌশলে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। তাদেরকে কটূক্তি করে, তাচ্ছিল্য করে- শুনেছি। তাদের কাজে যারা উপকৃত হবে, তারাই একদিন তাদের হয়ে কাজ করবে।”