“মুক্তিযোদ্ধারা সাম্যের জন্য যুদ্ধ করেছে। তাদের সম্মানের জন্য হলেও আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া উচিত।”
Published : 07 Jul 2024, 03:52 PM
চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোববার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়। পরে একটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে।
প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধের পর আন্দোলন জারি রাখার ঘোষণা দিয়ে ১টার দিকে রাস্তা থেকে সরে যান তারা।
শিক্ষার্থীদের চারটি দাবির মধ্যে রয়েছে-২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
অবরোধ চলাকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, “আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এ আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া মাত্রই আমাদের আন্দোলন শেষ।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইমন বলেন, “আমাদের দাবিগুলো কোনো রাজনৈতিক দাবি নয়। সংবিধান বহির্ভূত দাবিও না। সরকার বিরোধী আন্দোলনও আমরা করছি না, আমাদের একটাই চাওয়া আমাদের প্রাপ্য সুযোগটুকু যা এনে দিয়েছিল দেশের সূর্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধীন করার মাধ্যমে।
“মুক্তিযোদ্ধারা সাম্যের জন্য যুদ্ধ করেছে, তারা মানবিক মর্যাদার জন্য যুদ্ধ করেছে। সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য যুদ্ধ করেছে। তাদের সম্মানের জন্য হলেও আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া উচিত।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, “পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার দুপুর থেকে আমাদের অবরোধের ঘোষণা ছিল। কিন্তু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান রথযাত্রার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দুপুরের পরিবর্তে বেলা ১১টা থেকে অবরোধ শুরু করেছি।
“আমাদের এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের, জনমানুষের আন্দোলন। দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানের জন্য যাত্রীদের সাময়িক দুর্ভোগের জন্য আমরা দুঃখিত। আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া না হলে প্রয়োজনে সারা দেশ অচল করে দেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, “শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য বলেছি। পাশাপাশি আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল রেখেছি।
“যেহেতু এটা জাতীয় ইস্যু, দেশব্যাপী আন্দোলন চলছে; সেহেতু আমি নৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের বাধা দিতে দেইনি। তারা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি শেষ করেছে।”
এদিকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় বরাবরের মতো মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।