“দুইজনই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়াতে তাদের পরিবারের সদস্যরা অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। “
Published : 07 Jun 2024, 08:18 PM
কক্সবাজারে টেকনাফ উপজেলায় ২২ দিন আগে নাফ নদীতে কাঁকড়া আহরণ করতে যাওয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী চাকমা সম্প্রদায়ের দুই যুবকের খোঁজ মেলেনি এখনও।
নিখোঁজদের পরিবারের ধারণা, মিয়ানমারের চলমান সংঘাতের জেরে সীমান্তে সক্রিয় হয়ে উঠা রোহিঙ্গাদের কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের ‘অপহরণ করে আটকে’ রেখেছে।
তবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে এখনো পর্যন্ত কেউ মুক্তিপণ দাবি বা কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি।
ছৈলা মং চাকমা (৩০) ও ক্যমংথোএ তঞ্চঙ্গ্যা (১৯) নামে এ দুই যুবককে ফিরে পেতে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিবারের সদস্যরা।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লম্বাঘোনা চাকমা পল্লীর বাসিন্দা এই দুই যুবক পরস্পর আত্মীয়। ছৈলা মং চাকমা মৃত উচামং চাকমার ছেলে এবং ক্যামংথোএ তঞ্চঙ্গা মৃত মংতাইন চিং তঞ্চঙ্গার ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন টেকনাফের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতা মণি স্বপন চাকমা।
স্বপন বলেন, গত ১৬ মে সকাল ৭টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের হাউস দ্বীপের পাশে ৫ নম্বর গেইট এলাকায় নাফ নদীতে কাঁকড়া আহরণ করতে চাকমা সম্প্রদায়ের ওই দুই যুবক।
কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ঘরে না ফেরায় স্বজনরা দুঃশ্চিন্তায় পড়েন। তখন স্থানীয় অন্য জেলেরা জানায়, কয়েকজন ব্যক্তি অস্ত্রের মুখে দুই জনকে অপহরণ করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিয়ে গেছে। সেই থেকে তারা কি জীবিত নাকি মৃত এ বিষয়েও নিশ্চিত নন।
এদিকে দীর্ঘ ৩ সপ্তাহের পরও কোন ধরনের সন্ধান না মেলার একমাত্র উপার্জনক্ষম এই দুই যুবকের পরিবারে কান্নার রোল পড়েছে।
নিখোঁজ যুবকদের পরিবারে দিন দিন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলছে জানিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতা মণি স্বপন চাকমা বলেন, এই দুইজনই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়াতে তাদের পরিবারের সদস্যরা অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে।“
তিনি বলেন, “নিখোঁজদের স্বজনরা ঘটনার পরদিনই টেকনাফ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি বিজিবি ও র্যাবকেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়ে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।
“কিন্তু প্রশাসনের কাছে বার বার ধর্না দেওয়া হলেও তাদের উদ্ধারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ”
সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের সদস্যদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের কাছে নিঁখোজ দুই যুবককে উদ্ধারের জন্য আকুতি জানান হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু ও সাধারণ সম্পাদক প্রভংকর বড়ুয়া, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতা প্রভাত তঞ্চঙ্গা আলোসহ নিখোঁজ ছৈলামং চাকমার মা ছুচিংছা চাকমা ও স্ত্রী চিনু চাকমা এবং ক্যামংথোএ তঞ্চঙ্গার মা মাতাইন ছিং রও স্ত্রী ছিংমালা তঞ্চঙ্গা।
হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. শাহদাত হোসেন সিরাজী বলেন, নাফ নদীতে কাঁকড়া আহরণ করতে গিয়ে চাকমা সম্প্রদায়ের দুই যুবক নিখোঁজের ব্যাপারে ভুক্তভোগী স্বজনরা গত ১৮ মে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পরে থানা থেকে অভিযোগের তদন্তের জন্য তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘটনার ব্যাপারে কথা বলেছেন।
তবে তাদেরকে কারা, কি কারণে ধরে নিয়ে গেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, “নাফ নদীতে মাছ ধরার ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও অনেকে নিষেধাজ্ঞা না মেনে মাছ শিকার করছেন। এদের কেউ কেউ মিয়ানমারের জলসীমার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মাছ ধরেন। সীমান্তে কাজ করা নিয়ে পুলিশেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।“
তারপরও নিখোঁজদের সন্ধানে নানাভাবে পুলিশ খোঁজ খবর নেওয়া অব্যাহত রেখেছে বলে জানান শাহদাত হোসেন সিরাজী।
পুরানো খবর