জেলার চৌগাছা, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলায় হত্যার ঘটনাগুলো ঘটেছে।
Published : 30 Jun 2024, 11:44 PM
যশোরের তিন উপজেলায় চারজনকে হত্যার ঘটনায় দুজনের মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
রোববার যশোরের আলাদা দুটি আদালতের বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন বলে আইনজীবীরা জানান।
এর মধ্যে চৌগাছায় পিতা-মাতাকে হত্যার দায়ে ছেলেকে ও বাঘারপাড়ায় ভাবিকে হত্যার দায়ে দেবরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ২৫ বছর আগে অভয়নগরের একটি হত্যা মামলায় দুজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মামলার নথির বরাতে জেলা দায়রা জজ আদালতের পিপি ইদ্রিস আলী জানান, ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর যশোরের চৌগাছায় বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে বাবা মহির উদ্দিনের কাছে ২ হাজার টাকা চান ছেলে মিলন উদ্দিন। মহির টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে মিলন ঘরের ভেতর থেকে বড় দা বের করে এনে বাবাকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকেন। তখন আনোয়ারা বেগম আয়না ছুটে এসে স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা চালালে মিলন একই দা দিয়ে আয়না বেগমকেও কোপান। এতে বাবা-মা দুজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এ ঘটনায় তাদের আরেক ছেলে হুমায়ুন কবির চৌগাছা থানায় মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চৌগাছা থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম এনামুল হক আসামি মিলন উদ্দিনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান।
ওই মামলায় সপ্তম অতিরিক্ত দায়রা জজ জুয়েল অধিকারী আসামি মিলন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় মিলন আদালতে হাজির ছিলেন।
অন্যদিকে, ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল বাঘারপাড়া উপজেলার পান্তাপাড়া গ্রামের জুলফিকার আলীর স্ত্রী জিনিয়া ইয়াসমিন তুলি ঘরের ভেতর মোবাইল ফোনে স্বামীর সাথে কথা বলছিলেন। এ সময় তার দেবর বিমান বাহিনীর সাবেক করপোরাল প্রভোস্ট মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন সেখানে গিয়ে তুলিকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। তখন তুলির চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে শাহাবুদ্দিন ও তার মা ফরিদা বেগম বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
প্রতিবেশীরা তুলিকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাকে সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরদিন সকালে মারা যান দুই সন্তানের জননী জিনিয়া ইয়াসমিন তুলি।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা ঝিকরগাছা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বাঘারপাড়া থানায় একটি মামলা করেন।
ওই মামলার তদন্ত শেষে থানা পুলিশের এসআই রফিকুল ইসলাম নিহতের দেবর মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, শাশুড়ি ফরিদা বেগম ও স্বামী জুলফিকার আলীর নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলার নথির বরাতে অতিরিক্ত পিপি মো. আসাদুজ্জামান জানান, ওই মামলায় আসামি বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সুরাইয়া সাহাব শাহাবুদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন। এছাড়া মামলার অন্য দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাসের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
পিপি আরও জানান, আসামি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন পলাতক রয়েছেন।
এদিকে, অভয়নগরের হত্যা মামলার নথির বরাত জানা যায়, উপজেলার ধোপাদী গ্রামের নুর মোহাম্মদ দপ্তরীর ছেলে কাওসার আলী দপ্তরী নওয়াপাড়া বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলস সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৯৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নওয়াপাড়া বাজারে কাওসার আলী দপ্তরী, তার দুই ভাই সোহরাব দপ্তরী ও আফসার দপ্তরীসহ আরও কয়েকজন স্থানীয় শহিদ মেম্বারের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন।
এ সময় একদল সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সেখানে এসে কাওসার আলীকে ঘিরে ফেলেন। এরপর তারা গুলি চালিয়ে ও বোমা ফাটিয়ে কাওসারকে হত্যা করে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সোহরাব দপ্তরী ৮ জনকে আসামি করে অভয়নগর থানায় মামলা করেন।
আসামিরা হলেন, খুলনার ফুলতলা উপজেলার যুগ্নীপাশার কানা বাবু ওরফে বাবু, যশোরের অভয়নগর উপজেলার মহাকালের মাকসুদ, রাজঘাটের শান্ত, শংকরপাশার আব্দুর রশিদ, নওয়াপাড়ার নুর ইসলাম, বুইকরা গ্রামের রনি, নওয়াপাড়ার আব্দুর রশিদ ও আতিয়ার রহমান।
মামলার তদন্ত শেষে বাবু, আব্দুর রশিদ, মাকসুদ ও নুর ইসলামের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এছাড়া অপর চার আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়।
আদালতের বিশেষ পিপি সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা জানান, ওই মামলায় আসামি কানা বাবু ও মাকসুদকে জেলা ও দায়রা আদালতের বিশেষ জজ মোহাম্মদ সামছুল হক যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।
এছাড়া অন্য দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিই পলাতক আছেন।