চীনে ঝুয়াং নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ‘ব্যাঙ উৎসব’

স্থানীয় ভাষায় ব্যাঙকে ‘মাগুয়াই’ বলে, তাকে বৃষ্টি ও বাতাসের দেবতা হিসেবে উপাসনা করে।

মোহাম্মদ ছাইয়েদুল ইসলামচীন থেকে
Published : 21 March 2024, 09:08 AM
Updated : 21 March 2024, 09:08 AM

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অংশগ্রহণে ঐতিহ্যবাহী ‘ব্যাঙ উৎসব’ করেছে চীনের গুয়াংশি অঞ্চলে বসবাস করা ঝুয়াং জাতিগোষ্ঠী। উৎসবে ছিল আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের নানা লোকজ ক্রিয়াকলাপ, গান ও নাচ।

বাৎসরিক এ আয়োজন চীনা লুনার ক্যালেন্ডারের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় দিন চীনের গুয়াংশি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত তংলান কাউন্টিতে অনুষ্ঠিত হয়। উৎসব উদযাপনে সার্বিক সহায়তা করে তংলান কাউন্টির স্থানীয় প্রশাসন। 

ঝুয়াং নৃজাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনীর সাক্ষী হতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা অংশ নেয় এতে। এ উৎসবের একটি পর্ব হলো ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ব্যাঙের গান গাওয়া এবং ব্রোঞ্জ ড্রামের সুরেলা আওয়াজে নাচে অংশ নেওয়া।

উৎসবে অংশ নেওয়া বাংলাদেশিসহ বিদেশি পর্যটকরা ব্রোঞ্জ ড্রাম পিটিয়ে, ব্যাঙের নাচ এবং বাঁশের খুঁটিনাচের অভিজ্ঞতা নেন। তাছাড়া লাঙল নাচ, ফসলের নাচ, আশীর্বাদ নাচ, ঝুয়াং জিঙ্গেল, দ্বৈত লোকগান এবং বনফায়ার পার্টির মতো অনুষ্ঠানগুলো পালাক্রমে মঞ্চস্থ হয়।

উৎসবকে ঘিরে বাহারি খাবারের মেলা বসে। আশীর্বাদের আশায় ছোটরা বড়দের উত্তরীয় পরিয়ে দেয়, গালে মাখায় নানা ধরনের রং।

ঝুয়াং জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা তাদের স্থানীয় ভাষায় ব্যাঙকে ‘মাগুয়াই’ বলে থাকে এবং তাকে বৃষ্টি ও বাতাসের দেবতা হিসেবে উপাসনা করে। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, দেবতা ব্যাঙ বাতাস ও বৃষ্টির দায়িত্বে রয়েছে।

উৎসবের সময় স্থানীয় লোকজন দীর্ঘজীবী বৃদ্ধ ব্যাঙের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, ধুপ জ্বালানো এবং ধর্মীয় রীতিতে ব্যাঙের উপাসনা করে। একইসঙ্গে প্রতি বছর ভালো আবহাওয়া, প্রচুর শস্য এবং পুরো ঋতুতে মানুষ ও প্রাণীর সমৃদ্ধি কামনায় প্রার্থনা করে।

উৎসবে অংশ নেওয়া ইরাকি পর্যটক জামিল আহমেদ বলেন, “তংলানের জাতীয় সংস্কৃতি বোঝার এবং ব্যাঙ উৎসবে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি সম্মানিত। এটা খুবই বিশেষ ও প্রাণবন্ত উৎসব। আমি অনেক ছবি তুলেছি, ভিডিও করেছি। আমি তংলানকে বিশ্বে প্রচার করব, আমার বন্ধু ও পরিবারকে চীনা সংস্কৃতি উপভোগ করতে সুপারিশ করবো।”

থাইল্যান্ডের পর্যটক উ টিংটিং বলেন, “ব্যাঙ উৎসবে অংশ নেওয়া আমাকে মনে করিয়ে দিল, উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডের গ্রামগুলো খরার সময় বৃষ্টির প্রার্থনা অনুষ্ঠানের জন্য বিড়াল ব্যবহার করে। গ্রামের সবচেয়ে সুন্দর বিড়ালকে বেছে নিয়ে বসানো হয় প্রার্থনার অনুষ্ঠানে। তারা বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে এবং বিড়ালের উপর জল ছিটিয়ে দেয়। যদি বিড়ালটি দয়া করে, তাহলে শীঘ্রই বৃষ্টি হবে। প্রকৃতিতে পশু-পাখির মাধ্যমে মানুষের যোগাযোগের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি খুবই আকর্ষণীয়।”

চীন ৫৬টি জাতিগোষ্ঠীর একটি বহুজাতিক দেশ। জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯১.৬ শতাংশ হলো হান জাতিগোষ্ঠী। দেশটির অন্যান্য ৫৫টি জাতিগোষ্ঠীকে প্রথাগতভাবে ‘সংখ্যালঘু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ঝুয়াং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অন্যতম, যারা চীনের গুয়াংশি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বসবাস করে।