যুক্তরাজ্যে পাঁচ বছরের মধ্যে তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন লেবার পার্টির জন্য সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হার বয়ে আনলেও দমানো যায়নি চার বাঙালি কন্যাকে।
Published : 13 Dec 2019, 01:00 PM
লেবার পার্টির এমপি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ও রূপা হক বড় জয়ে তাদের আসন ধরে রেখেছেন। তাদের সঙ্গে এবার আফসানা বেগমও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দলের বেঞ্চে বসবেন।
এবারই প্রথম চারজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপি প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন গণতন্ত্রের সূতিকাগারে।
নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগেই বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে এই সাধারণ নির্বাচন ছিল কার্যত ব্রেক্সিটের ভাগ্য নির্ধারণের ভোট। আর তাতে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিপরীতে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি অর্ধশতাধিক আসন খুইয়েছে।
তবে লেবার পার্টির ব্রিটিশ বাঙালি চার নারী প্রার্থীর সবাই বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন।
Thank you Hampstead & Kilburn for electing me once again. Thanks to all my volunteers & my family. But devastated by our national results- sorry to lose such talented MPs. Tough times ahead, we have to work together. #ElectionNight pic.twitter.com/u1hBb4CLiy
— Tulip Siddiq (@TulipSiddiq) December 13, 2019
নির্বাচনে জয়ের পর টিউলিপ সিদ্দিক, সঙ্গে (বাঁয়ে) স্বামী ক্রিস পার্সি এবং (ডান থেকে) মা শেখ রেহানা, ছোট বোন আজমিরা সিদ্দিক রূপন্তী ও ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।
উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। কনজারভেটিভ পাটির জনি লুককে ১৪ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ ২০১৫ সালে লেবার পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী হন। পরের দফায় ২০১৭ সালের নির্বাচনে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন।
I thank the voters of Ealing, Acton and Chiswick for placing their trust in me for the third time in four years. Gutted for good colleagues who will not be returning to Parliament and indeed for the nation which will be poorer for five more years of rightwing Tory rule and Brexit https://t.co/iYUaF2mJbk
— Rupa Huq (@RupaHuq) December 13, 2019
একদিকে পারিবারিক পরিচয়, অন্যদিকে লন্ডনের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে প্রার্থিতার কারণে টিউলিপ সব সময়ই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। ৩৭ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিককে পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।
টিউলিপ প্রথমে ইংরেজি এবং পরে রাজনীতি, নীতি ও সরকার বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন যুক্তরাজ্যের অন্যতম শীর্ষ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট নেতা বারাক ওবামার প্রচারাভিযানেও অংশ নেন।
৪৮ বছর বয়সী রূপা ২০১৫ সালের নির্বাচনে রক্ষণশীলদের হাত থেকে আসনটি পুনরুদ্ধার করেছিলেন। ২০১৭ সালের নির্বাচনে তিনি ব্যবধান বাড়িয়ে আসনটি ধরে রাখেন। আর এবার তিনি কনজারভেটিভ প্রার্থী জুলিয়ান গ্যালান্টকে হারিয়েছেন ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে।
রূপ হক কেমব্রিজে রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন পড়েছেন। তিনি পড়াচ্ছেন সমাজবিজ্ঞান, অপরাধবিজ্ঞান, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যায়নের মতো বিষয়। শিক্ষক রূপা এর আগে ডেপুটি মেয়র হিসাবে স্থানীয় সরকারে দায়িত্ব পালন করেছেন।
লেখক, মিউজিক ডিজে, যুক্তরাজ্যের কয়েকটি প্রধান দৈনিকের কলামনিস্ট রূপার ছোট বোন কনি হক বিবিসির ব্লু পিটার শো উপস্থাপনার কল্যাণে ব্রিটিশদের কাছে খুব পরিচিত নাম।
এর মধ্যে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে গত তিনবারের এমপি সিলেটের বিশ্বনাথের মেয়ে রুশনারা আরও পাঁচ বছর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে থাকার টিকেট পেয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে তার ভোট আরও বেড়েছে। কনজারভেটিভ প্রার্থী নিকোলাস স্টভোল্ডকে তিনি হারিয়েছেন সাড়ে ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী প্রথমবার নির্বাচিত হন ২০১০ সালের নির্বাচনে। সে সময় তিনি পার্লামেন্টারি ট্রেজারি সিলেক্ট কমিটির সদস্য ছিলেন। কনজারভেটিভ সরকারের আমলেও তিনি বাংলাদেশ-বিষয়ক বাণিজ্য দূতের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাধারণ এক কর্মজীবী বাঙালির মেয়ে রুশনারা পরিবারের প্রথম সদস্য, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। তিনি দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ডিগ্রি নিয়েছেন অক্সফোর্ডের সেইন্ট জন’স কলেজ থেকে।
টাওয়ার হ্যামলেটস বারার অন্য আসন পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস থেকে প্রথমবার নির্বাচন করেই বাজিমাত করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আফসানা বেগম। এই লেবার প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হয়েছেন কনজারভেটিভ প্রার্থী শিউন ওককে প্রায় ২৯ হাজার ভোটে হারিয়ে।
আফসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসে হলেও বাংলাদেশে তাদের আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের আবাসন বিভাগে চাকরি করছিলেন তিনি।
এই আসনে লেবার পার্টির দুই দশকের এমপি জিম ফিটজপেট্রিক চলতি বছরের শুরুর দিকে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন। লেবার দলের নিরাপদ এই আসনে মনোনয়ন নিয়ে লড়াইয়ের মধ্যে অনেকটা চমকে দিয়ে মনোনয়ন পেয়ে যান অপেক্ষাকৃত তরুণ আফসানা।
কুইনমেরী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতিতে লেখাপড়া করা আফসানার বাবা মনির উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর ছিলেন।
তিন দল থেকে মোট সাতজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশ নিলেও লেবারের চারকন্যা ছাড়া জয় পাননি কেউ।
লেবার পার্টি থেকেই তৃতীয়বারের মত লন্ডনের বেকেনহাম আসনে নির্বাচন করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের মেয়ে ব্যারিস্টার মেরিনা আহমেদ। এবারও তিনি কনজারভেটিভ প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন বড় ব্যবধানে।
কনজারভেটিভ পার্টি নির্বাচনে জয় পেলেও এ দলের একমাত্র বাঙালি প্রার্থী আনোয়ারা আলী নিজের আসনে ভোটে জিততে পারেননি। হ্যারো ওয়েস্ট আসনে তিনি লেবার প্রার্থীর কাছে হেরেছেন নয় হাজার ভোটের ব্যবধানে।
আর মৌলভীবাজারের মেয়ে বাবলিন মল্লিক লিবডেমের মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছিলেন কার্ডিফ সেন্ট্রাল আসন থেকে। ভোটের টালিতে তার অবস্থান এবার তৃতীয়।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |