প্রবাসী লেখক দেওয়ান শামসুল আরেফীনের (৭৩) লেখালেখির ৫৫ বছর উপলক্ষে প্রবাসের লেখক-সাহিত্যিক আর গুণিজনদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে।
Published : 29 Oct 2019, 07:23 PM
একইসাথে সম্প্রতি প্রকাশিত তার দুইটি বই ‘ওবামা’ এবং ‘নেলসন ম্যান্ডেলা এবং সন্ত্রাস ও শান্তির উপর আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে পিসক্যাটাওয়ে শহরের জন এফকেনেডি লাইব্রেরি মিলনায়তনে রোববার অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বাংলাদেশি রোডস স্কলার ফখরুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ওয়াজেদ এ খান ও লেখক মাহমুদ রেজা চৌধুরী।
ভিন্নধর্মী গ্রন্থ পর্যালোচনা এবং মানবতার জন্যে নিবেদিত প্রবীণ এই লেখকের লেখালেখী সম্পর্কিত এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ফিজিক্সের অধ্যাপক জাহিদ হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত কাজী আফজালুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বগুড়ায় পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ প্ল্যানিং কমিশনের সাবেক সদস্য কে এম এস এ কায়সার, রাটগার্টস ইউনিভার্সিটির বিজনেস ও ইকোনমিক্স এর অধ্যাপক মাহমুদ হাসান ও লেখিকা সেলিনা আকতার।
হিমুর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে স্বাগত বক্তব্যে লেখক দেওয়ান শামসুল আরেফীন লেখালেখির শুরুর দিকের স্মৃতিচারণ করেন। তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেরও আগে কলেজ জীবনের লেখালেখির প্রসঙ্গ। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে লন্ডনে ‘জনমত’ এর বাংলাদেশে সহোদর প্রকাশনা ‘জনমত’ এ কার্যকরী সম্পাদক এবং ‘চরমপত্র’র সম্পাদনা পরিষদসহ অন্যান্য সাময়িকীর সম্পাদক ও সংশ্লিষ্টতার কথা। এজন্য তাকে অনেক সময় প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শামসুল আরেফীন। তার বইগুলো প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।
সমাজবিজ্ঞানী হলেও শামসুল আরেফীনের লেখনীর সিংহভাগ জুড়ে আছে রাষ্ট্র ও আমেরিকার রাজনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ। তার লেখাগুলো আমেরিকার সমাজ ও রাজনীতি নির্ভর। তারপরও তিনি ভুলে যাননি বাংলাদেশের কথা। বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতি, চলমান সমস্যা ও এসবের ভয়াবহতা সম্পর্কেও তার লেখায় ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আলোচকগণ।
দেশে দেশে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাজনীতিকরা কীভাবে সন্ত্রাসকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন ‘নেলসন ম্যান্ডেলা এবং সন্ত্রাস ও শান্তি’ এবং ‘মুনাফার সন্ত্রাস’ বইয়ে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন লেখক।
দেওয়ান শামসুল আরেফীন সমাজ এবং রাষ্ট্রকে যে মাত্রা ও আঙ্গিকে দেখতে চান তার লেখনিতে তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন বলে মন্তব্য করেন সকলে। তিনি আমেরিকা এবং গোটা বিশ্বকে স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ঘটনার পরম্পরায় তা বিশ্লেষণ করেছেন। অনুসন্ধান করেন পেছনের কারণসমূহ। প্রতিকারের পথ দেখাতে চেষ্টা করেন। সমসাময়িক প্রসঙ্গ এবং নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ তার বইগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আলোচকরা মনে করেন, দেওয়ান শামসুল আরেফীন লেখনীর মধ্য দিয়ে অনাদিকাল বেঁচে থাকবেন এ সমাজে।
দেওয়ান শামসুল আরেফীনের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ওবামা, নেলসন ম্যান্ডেলা এবং সন্ত্রাস ও শান্তি, ডানের শত্রু সত্য বামের শত্রু সত্য-সত্যের মিত্র কে?, মুনাফার সন্ত্রাস, লাইফ অ্যান্ড ডেথ নো ফ্রিডম ইয়েট, ফ্রোর্টেস আমেরিকা-ব্লু-স্কার্ট ডি কন্সট্রাকশনের গ্লোবালাইজেশন, তৃতীয় বিশ্বে পাতি বুর্জোয়া ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, রিপ্রেশন ইন মার্কস-ওয়েবার অ্যান্ড ফ্রিউড এবং ‘ভাসানী দ্য মওলানা, ভাসানী দ্য কমরেড’।
এছাড়া তার অনুবাদ গ্রন্থ ‘টুয়েন্টি ইয়ার্স আফটার দ্য জেনোসাইড ইন বাংলাদেশ’ পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেওয়ান শামসুল আরেফীন নিউ জার্সি এবং নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত দেশ এবং আন্তর্জাতিক আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রগতিশীল ত্রৈমাসিক ‘দি টারগাম’ এবং দি লিভিংস্টন’ এর নিবন্ধকার। তার অনূদিত মায়া এঞ্জেল্যু, ল্যাংস্টন হিউগস, তানুর ওহিদা প্রমুখের কবিতা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। দেশে থাকাকালীন তিনি সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ক সাময়িকী ‘স্বপক্ষে’ এর ছিলেন প্রধান সম্পাদক। দি মিশনের সহযোগী সম্পাদক এবং কবিতা সংকলন ‘কাক’ এবং ‘কৌনিক’ এর সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন দেওয়ান শামসুল আরেফীন।
শুধু সাহিত্য নয় সামাজিক ক্ষেত্রে তার রয়েছে সক্রিয় অংশগ্রহণ। তিনি নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউ জার্সির সভাপতি ছিলেন তিন মেয়াদে। ফোবানা অষ্টম এবং দশম সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন দেওয়ান শামসুল আরেফিন। লেখালেখির ৫৫ বছরে তার মেয়ে তন্মী, জামাতা মার্সেল, নাতনি জেইন এবং সাদিয়া শুভেচ্ছা জানান।
এ অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত বইয়ের বিক্রয়কৃত অর্থ তিনি দান করে দেয়ার ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। দেওয়ান শামসুল আরেফীনের সতীর্থ বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার সালাউদ্দিন জাকি অনুষ্ঠান উপলক্ষে লেখককে একটি পত্র পাঠিয়েছেন। লেখকের ডাক নাম -বাদল। জাকি তাকে এই নামে সম্বোধন করে অতীত স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। অনুষ্ঠানে পত্রটি পাঠ করেন খন্দকার আনোয়ার। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
নিউ জার্সির রাটগার্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও নৃতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক দেওয়ান শামসুল আরেফীন একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নকালেই লেখালেখিতে তার হাতেখড়ি। শিক্ষাজীবন শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন কিছু সময়। এরপর উচ্চ শিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। নতুন করে জীবন যুদ্ধে লিপ্ত হলেও থেমে থাকেনি তার লেখালেখি। এভাবেই গড়িয়ে গেছে অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময়।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |