সিডনিতে গরমের সময় হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। এই সময় মানুষের সাগর পাড়ে যাওয়ার পরিমাণও বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
Published : 14 Feb 2017, 11:05 AM
সিডনি সাগর পাড়ের জায়গা। এ শহরের চারিদিকেই অনেক সমুদ্র সৈকত। শহরের ভেতর ঢুকলেই শুনতে পাওয়া যায় ঢেউয়ের শব্দ।
ছোটবেলা থেকেই সাগর আমার অনেক প্রিয়। তাই সময় পেলেই বেরিয়ে পড়ি আমরা যেকোনও সাগর পাড়ে সময় কাটানোর জন্য। সাগরের কাছাকাছি বলে সিডনিতে থাকা তাই আমার কাছে আরও আনন্দের। মোটামুটি সিডনির আনাচে-কানাচে যতগুলো বিচ আছে, সেগুলো বেড়ানো হয়ে গেছে আমাদের।
এই বছর গরম আসার পর তেমন একটা যাওয়া হয়নি কোন বিচে। আমার ভাল লাগলেও ইদানিং আমার পতি-দেবতা বিচে যেতে গাইগুই করেন। তার আবার পাহাড় পছন্দ। তাই গেলে সেখানে পাহাড় থাকতে হবে। ফলে বিচে যেতে হলে আগে অনেক গুগল করা আর পরিকল্পনা করতে হয়,কোথায় পাহাড় আর সাগর একসাথে আছে দেখতে হয়।
সিডনি শহর থেকে প্রায় ৬২ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণে ওলোঙ্গন শহরের কাছে এই ‘স্ট্যানওয়েল বিচ’ অবস্থিত। আমরা ট্রেনে করে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা মনে করিয়ে দিল শ্যামল বাংলার প্রকৃতি।
যেতে যেতে পথে চোখে পড়ে সবুজ মাঠের পর মাঠ। কোথাও দেখা যাচ্ছে ভেড়ার পাল, আবার কোথাও বা ঘোড়ার আস্তাবল। দুই- একটি ঘোড়াও দেখা যাচ্ছে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রেনের ভেতর থেকে মনে হচ্ছিল প্রকৃতি যেন দু’হাত মেলে তার সবটুকু দিয়ে সাজিয়েছে এই অপরূপ পৃথিবীটাকে।
সোনালি বালুতে শুরু হল আমাদের বালিঘর বানানো। এই সাগরের ঢেউ অনেক বড় বড়। তাই কিছুটা ভয়ও লাগল, যেহেতু সাথে আমাদের আড়াই বছরের মেয়ে ছিল। কিন্তু সার্ফিং করার দারুণ জায়গা। এখানে বালু অনেক গভীর। তাই অনেককে দেখলাম ‘বুশ ওয়াকিং’ করছে। বালুতে হেঁটে হেঁটে পাহাড়ে উঠছে হাতে দুইটা লাঠি নিয়ে,সেটা এক দারুণ রোমাঞ্চকর অনুভূতি!
নীল পানিতে সাদা সাদা ঢেউ, সাথে ওপরে রৌদ্রজ্জ্বল বিশাল নীল আকাশটা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সাগর পাড়ে বালুকাবেলায় দাঁড়িয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে দূর অজানায়। কিছুটা সময়ের জন্য হলেও সব কোলাহল ছেড়ে কোন এক অজানা প্রশান্তির ছোঁয়ায় কোথাও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করেছিল যেন। ঢেউয়ের প্রতিটা শব্দে মনের গহীনে এসে আছড়ে পড়ছে। সোনালি বালুতে পা ডুবিয়ে বসে ছিলাম অনেকক্ষণ। গুনগুন করছিলাম-
“আমি শুনেছি সেদিন তুমি
সাগরের ঢেউয়ে চেপে,
নীলজল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছো।
আমি শুনেছি সেদিন তুমি
নোনাবালি তীর ধরে
বহু দূর বহু দূর হেঁটে এসেছো।
আমি কখনো যাইনি জলে
কখনো ভাসিনি নীলে
কখনো রাখিনি চোখ
ডানা মেলা গাংচিলে।
আবার যেদিন তুমি
সমুদ্র স্নানে যাবে
আমাকেও সাথে নিও
নেবে তো আমায়?”
ধ্যান ভাঙলো মেয়ের ডাকে- “চল উপরে যাব।”
আমরা গেলাম স্ট্যানওয়েল টপে। সেখান থেকে সাগর-পাহাড় আর আকাশের অপূর্ব মিতালি দুচোখ ভরে উপভোগ করলাম।এত সুন্দর আমাদের এই পৃথিবী! আমার দুচোখ ভরে পানি চলে এলো আনন্দে, হয়তো চলে যাওয়ার বেদনায়, জানিনা!
“সেই সে বালুকাবেলায় মনে পড়ে হাজারো কথায়
মুখরিত অবুঝ এই হৃদয় আবেগী সীমানায় হারিয়ে ছিলো।”
যাওয়ার পথে পড়ন্ত সূর্যের লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। যেন আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে, বলছে- “আবার এস।”
মনে মনে বললাম, “আসব আবার, আসব নীল সাগর। তোমার কোলে সূর্যাস্ত দেখতে।”
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ, আড্ডা, আনন্দ বেদনার গল্প, ছোট ছোট অনুভূতি, দেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected] . সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |