প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় কোনো বাংলাদেশি হতাহত না হলেও সন্দেহ আর অবিশ্বাসের শিকার হওয়ার শঙ্কা কাজ করছে অনেকের মধ্যে।
Published : 15 Nov 2015, 05:12 PM
তারা বলছেন, শুক্রবারের ওই হামলার পর আতঙ্কিত নগরবাসীর অনেকেই বিদেশিদের সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছেন।
আর বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে আরও হেনস্থার শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রবাসীদের কেউ কেউ।
বাংলাদেশের একটি টেলিভিশনের প্যারিস প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন দেবেশ বড়ুয়া। তিনি বলেন, শুক্রবারের হামলার পর পুরো শহরজুড়েই এক ধরনের আতঙ্ক রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই কারও কারও মধ্যে সন্দেহ কাজ করছে।
“একটা আতঙ্ক, একটা অবিশ্বাস আছে। আইএস হামলার দায় স্বীকার করায় এবং বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ায় হেনস্থার শিকার হতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে।”
শামসুল ইসলাম নামে আরেক প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, “এক ধরনের চাপা আতঙ্ক আছে, কিন্তু এখানে বাংলাদেশি কমিউনিটি সম্পর্কে সবার ধারণা ভালো। অবিশ্বাসের শিকার হওয়ার বিষয়টা অগাম ভাবনা।”
উইকএন্ডের শুরুতে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্যারিসের একটি কনসার্ট হল ও স্টেডিয়ামসহ পাঁচটি স্থানে একই সময়ে অ্যাসল্ট রাইফেল ও বোমা নিয়ে চালানো ওই হামলায় নিহত হন ১২৯ জন। বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্যারিসে এতবড় হত্যাকাণ্ড আর ঘটেনি।
ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম ঢাকার একটি টেলিভিশনকে জানান, ওই হামলায় বাংলাদেশি কেউ হতাহত হননি।
“আমরা সবখান থেকে খবর নিয়েছি, কোনো বাংলাদেশি বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফরাসি হতাহত হননি। একজন বাংলাদেশি স্তাদে দে ফ্রঁসে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি আমাদের বলেছেন, বাইরে বিস্ফোরণে হতাহতদের মধ্যে বাংলাদেশি কেউ নেই।”
বাঙালি কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে একটি বাংলাদেশি মসজিদ আছে, স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির কেউ মারা গেলে দাফন-কফনের আনুষ্ঠানিকতা সেখানে হয়। তাদের কাছেও আমরা খবর নিয়েছি, বাংলাদেশি কারও হতাহতের খবর পওয়া যায়নি।”
শুক্রবার ওই হামলার পর শনিবার অনেকেই আতঙ্কে ঘর থেকে বের হননি। জীবিকার প্রয়োজনে যারা বেরিয়েছেন, তাদের মধ্যেও কাজ করেছে আতঙ্ক।
জাহিদুল ইসলাম নামে প্রবাসী এক দোকানকর্মীকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করলেও শনিবার তিনি ছিলেন চার ঘণ্টা।
“ক্রেতা একেবারেই ছিল না। সব দোকানপাটের একই অবস্থা। বেশিরভাগ দোকানপাটই ছিল বন্ধ। রাস্তায় মানুষজন যা বেরিয়েছে, তাদের মধ্যে ফরাসি ছিল খুব কম। সবাই পরস্পরের দিকে তাকাচ্ছিল প্রচণ্ড সন্দেহ নিয়ে। ক্ষোভ বা বিদ্বেষ নয়, সন্দেহ প্রবণতা কাজ করছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না,” বলেন তিনি।
এই অস্বস্তি আসলে কাজ করছে প্যারিসের পুরো মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভেতরেই। যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর পুরো পশ্চিমা বিশ্বে মুসলমানদের যে ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল, এবারও তেমনটি ঘটতে পারে বলে তাদের শঙ্কা।
জামাল নামে ৪৪ বছর বয়সী একজনকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলা লিখেছে, “আমরা হামলাকারীদের মতো নই। তাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্কও নেই। কিন্তু ফরাসীরা আমাদেরকে আর আপন করে নেবে না।”
প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা এখন থেকে সরাসরি আমাদেরকে জানাতে পারেন। পুরো নাম, ঠিকানা ও ছবিসহ লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায় [email protected]