বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে ঢাকা-এথেন্সের মধ্যে চুক্তি হলেও লক্ষণীয় কোনো অগ্রগতি নেই।
Published : 01 Jan 2025, 11:22 PM
ইউরোপের দেশ গ্রিসে কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। শুধু গ্রিক মালিকই নয়, কর্মীর অভাবে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশি তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরাও।
গ্রিক শ্রমবাজারে শ্রমঘাটতি মেটাতে ৩ লাখ বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে নিয়োগকর্তারা বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিয়োগকারী সংস্থাগুলো।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে ঢাকা-এথেন্সের মধ্যে চুক্তি হলেও লক্ষণীয় কোনো অগ্রগতি নেই। বর্তমানে গ্রিসের পোশাক কারখানা শিল্পে একচেটিয়া বাজার ধরে রেখেছেন বাংলাদেশিরা। তৈরি পোশাক খাতে সুনামও রয়েছে বাংলাদেশিদের। ফলে অনেক উদ্যোক্তাই এখন ঝুঁকছেন এ ব্যবসায়।
একটা সময় স্থানীয় ও আবরদের দখলে ছিল তৈরি পোশাক খাত। বাংলাদেশিসহ এশিয়ানরা কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন তাদের কারখানায়। নানা হয়রানির শিকার হতেন। তারপর দিন বদলাতে শুরু করে। বাংলাদেশিরা ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন পোশাক তৈরির কারখানা।
সফলতা পাওয়ায় দিন দিন বাড়তে থাকে এর সংখ্যা। বর্তমানে এথেন্সে রয়েছে বাংলাদেশিদের প্রায় ৪ শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ১০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি।
গ্রিসের বাংলাদেশি মালিকানাধীন কারখানাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, স্বদেশি মালিকদের অধীনে কাজ করে খুশি কর্মীরাও। বর্তমানে গ্রিসের বাংলাদেশি পোশাক কারখানাগুলোতে ১০ থেকে ১২ হাজার কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক খাতে কর্মী নেওয়ার সুযোগ মিললে গ্রিসে ব্যবসার পরিধি আরো বাড়বে বলেও মনে করছেন ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতারা।
বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ইন গ্রিসের সাধারণ সম্পাদক সফল ব্যবসায়ী এইচ এম জাহিদ ইসলাম বলেন, “আমাদের বাংলাদেশি মালিকদের ৪ শতাধিক গার্মেন্টস কারখানায় প্রায় ১০ হাজারের মতো বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। আমাদের কারখানায় শুধু বাংলাদেশিই নয়, গ্রিক, আলবেনিয়া, পাকিস্তানিসহ বিভিন্ন দেশের লোকজন কাজ করে। তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশিদের ৯০ শতাংশ ব্যবসায়ীই এখন ভালো অবস্থানে রয়েছেন।”
এইচ এম জাহিদ ইসলাম আরো বলেন, “তৈরি পোশাক খাতে কর্মী সংকট রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি এ খাতে কর্মী আসার সুযোগ হলে গ্রিসে আমাদের ব্যবসা আরো চাঙ্গা হবে।”
এছাড়া কর্মী সংকটে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী গ্রিসের কৃষিখাত। খামার শ্রমিকের অভাব দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে।
গ্রিসে আন্তর্জাতিক শ্রমিকের চাহিদা ও যোগান নিয়ে কাজ করা প্রথম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্কগ্রিস ডটআইও-এর প্রধান কার্যনির্বাহী বেঙালিস কানেলোপৌলস গ্রিক গণমাধ্যমে বলেন, “প্রায় ২ হাজার ছোট-বড় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গ্রিসে বিদেশি কর্মী নিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ওয়ার্কগ্রিস ডটআইও প্লাটফর্মের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, মিশর, জর্জিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মলডোভা, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপাইন্স ও ভিয়েতনামসহ ১১টি দেশের ৩৫ হাজারেরও বেশি সম্ভাব্য অভিবাসী কর্মী গ্রিসে আসতে আগ্রহ দেখিয়ে নিবন্ধন করেছেন।”
এদিকে কর্মী পাঠাতে ২০২২ সালে গ্রিসের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী, বছরে ৪ হাজার কর্মী নেওয়ার কথা। কৃষিশ্রমিকদের জন্য দেওয়া হবে ৫ বছরের ওয়ার্ক পারমিট।
কিন্তু জনশক্তি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্রিসে কর্মী পাঠানো নিয়ে সরকারের স্পষ্ট দিক নির্দেশনা নেই। এছাড়া ভিসা জটিলতাও রয়েছে।
এ ব্যাপারে গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা রহমান সুমনা বলেন, “অনেক বাংলাদেশিদের ভিসার আবেদন দিল্লিতে গ্রিক দূতাবাসে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা একাধিকবার গ্রিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, তারা আশ্বাস দিয়েছে খুব শীঘ্র এর সমাধান হবে।”
অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস না থাকায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এ দূতাবাস চালু হলে চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর দেশটিতে ৪ হাজার কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য বাজার আরও শক্তিশালী হবে।