পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি: ফখরুল

সেনাবাহিনীর মনোবল ভাঙার উদ্দেশ্যে পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছিল, বললেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2023, 08:05 AM
Updated : 25 Feb 2023, 08:05 AM

১৪ বছর আগে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যে হত্যাকাণ্ডের দায়ে বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টুর সাজা হয়েছিল।

রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহের বার্ষিকীতে শনিবার ঢাকার বনানী সেনা কবরস্থানে নিহতদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানোর পর এই দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা মনে করি যে, এই ঘটনার যেভাবে তদন্ত হওয়ার দরকার ছিল, যেভাবে সুষ্ঠু তদন্তের মধ্য দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদেরকে এবং এর পেছনে যারা ছিলেন তাদেরকে বের করে নিয়ে আসার যে তদন্ত প্রক্রিয়া হওয়া উচিৎ ছিল, সেটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে সংঘটিত হয়নি।

“আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখেছি যে, সেনাবাহিনী একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিল, সেটার পূর্ণাঙ্গ চেহারা দেশবাসী জানতে পারেনি। পরবর্তীকালে যে বিচারের ব্যবস্থা হয়েছে, সেই বিচারের ব্যবস্থায় আমরা দেখেছি- দুই বিষয়ে বিচার হয়েছে। সাজা হয়েছে কিছু মানুষের, কিছু মানুষের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, কিছু মানুষকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৭ হাজারের মতো সৈনিক যারা অনেকে দাবি করেন যে, তারা সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। এখন পর্যন্ত মামলাটার শুনানি শেষ করা হয়নি।”

২০০৯ সালে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে হত্যামামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপি নেতা পিন্টু ও আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনের কারাদণ্ডের রায় হয়েছিল।

২০১৭ সালে দেওয়া হাই কোর্টের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। পিন্টু তার আগে কারাগারে মারা যান। তোরাব আলী খালাস পান হাই কোর্টের রায়ে।

একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলার রায় এখনও আসেনি বিচারিক আদালত থেকে।

ফখরুল বলেন, “আমি কিছুদিন আগে কারাগারে ছিলাম। সেখানে দেখেছি যে, অনেক প্রাক্তন বিডিআরের সদস্য যাদেরকে এই মামলার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে তারা ১৩/১৪ বছর ধরে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের পরিবার নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের সমস্ত ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে গেছে।

“আমরা এই দাবি করব, যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, জুডিশিয়ারি সমস্যাগুলো অতিদ্রুত সম্পাদন করে এদের একটা ব্যবস্থা করা উচিৎ, তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত। এই বিষয়গুলো দেখে এই মানুষগুলোকে তাদের পরিবার পরিজনের কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার একটা সুযোগ সৃষ্টি করা হোক।”

সকাল সাড়ে ১০টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন হয়। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজম, অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল মুস্তাফিজুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জহুরুল আলম, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফয়সাল, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল জয়নাল আবেদীন, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিয়াজ আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর কোহিনুর আলম নূর, অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হারুনুর রশীদ ভুঁইয়া, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান এসময় উপস্থিত ছিলেন।

Also Read: পিলখানা হত্যাকাণ্ড: বিচারের শেষ দেখা এখনও বাকি

ফখরুল বিদ্রোহী জওয়ানদের হাতে নিহত বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভুঁইয়ার সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে স্মৃতি স্তম্ভে যান।

‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’

সেনাবাহিনীর মনোবল ভাঙার উদ্দেশ্যে পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছিল বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাদের পরিবার-পরিজনসহ হত্যা করা হয় এবং একটা ভয়াবহ নৃশংস ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়। এটা একটা চক্রান্ত ছিল দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে, আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীর মনোবলকে ভেঙে ফেলার জন্য।”

তিনি বলেন, “এই ঘটনার মধ্য দিয়ে যে প্রচেষ্টাটা চালানো হয়েছে, উদ্দেশ্য ছিল মূলত আমাদের যে গর্ব সেনাবাহিনী, তার মনোবলকে ভেঙে দেওয়া। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য যারা তাদের প্রাণ উৎসর্গ করেন, যারা শপথ নিয়েছেন তাদেরকে এভাবে সম্পূর্ণ নৃশংসভাবে, অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা, এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র ছিল।”

‘মিথ্যা অভিযোগ’

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের দিন সকাল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের এই বক্তব্যে উড়িয়ে দিয়েছেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “এটা সম্পূর্ণ দায়িত্বহীন একটা কমেন্ট। উনাদের সমস্যাটা হচ্ছে, উনারা মূল সমস্যায় না গিয়ে সব সময় অন্য দিকে যেতে চান। কারণ এই ঘটনাগুলো তারা সেভাবে সমাধান করতে পারেননি।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে চাই। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বই হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এজন্য এখন প্রয়োজন সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আমরা ফিরে পেতে চাই।

“আমরা মনে করি, একটি সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু অবাধ, সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা সংকটগুলোর সমাধান করতে পারব।”