অনুমোদিত কমিটি না থাকায় দলটির নিবন্ধনও শঙ্কার মধ্যে পড়েছে।
Published : 12 Dec 2023, 09:18 PM
অনুমোদিত কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে গণতন্ত্রী পার্টির দুই পক্ষের সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ইসিতে নিবন্ধিত এ দলের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলীর পক্ষের সাতজন এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষের পাঁচজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন এবার।
মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হিসেবে নিজেদের নামে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলাদা চিঠি দিয়েছিলেন।
ইসি বলছে, দলটির ‘অনুমোদিত কোনো কমিটি বিদ্যমান না থাকায়’ গণতন্ত্রী পার্টির সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সব মিলিয়ে ২৯টি দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন; গণতন্ত্রী পার্টি বাদ পড়ায় ভোটে রইল ২৮টি দল।
মঙ্গলবার ইসির উপ-সচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, “নির্বাচন কমিশনের সাথে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ‘গণতন্ত্রী পার্টি’ নামীয় দলটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক পৃথক পৃথকভাবে দাখিলকৃত কমিটি মাননীয় কমিশন কর্তৃক না-মঞ্জুর করা হয়েছে। সুতরাং গণতন্ত্রী পার্টি নামীয় রাজনৈতিক দলের অনুমোদিত কোনো কমিটি বিদ্যমান নেই।
“এমতাবস্থায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ‘গণতন্ত্রী পার্টি’ নামীয় দলের কোনো পদধারী কর্তৃক দাখিলকৃত প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য ইসি নির্দেশ দিয়েছে।”
বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৪৪টি। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি দল ভোটে অংশ নিচ্ছে এখন।
রাজনৈতিক দল থেকে যত প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন
আওয়ামী লীগ (নৌকা): ৩০৪ জন
জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল): ৩০৪ জন
জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল): ২১৮ জন
তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) : ১৫১ জন
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (আম): ১৪২ জন
বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব): ১১৬ জন
জাসদ (মশাল): ৯১ জন
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা): ৮২ জন
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি): ৭৪ জন
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট –বিএনএফ (টেলিভিশন): ৫৫ জন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন –বিএনএম (নোঙ্গর): ৪৯ জন
বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (ফুলের মালা): ৪৭ জন
ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার): ৪৫ জন
ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার): ৩৯ জন
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি): ৩৭ জন
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা): ৩৪ জন
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি (হাঁতুড়ি): ৩৩ জন
গণফ্রন্ট (মাছ): ২৫ জন
জাতীয় পার্টি-জেপি (বাই সাইকেল): ২০ জন
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি): ১৮ জন
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ): ১৪ জন
বিকল্প ধারা বাংলাদেশ (কুলা): ১৪ জন
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল): ১৩ জন
গণফোরাম (উদীয়মান সূয): ৯ জন
বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (চাকা): ৬ জন
বাংলাদেশ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (কুঁড়েঘর): ৬ জন
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (হাত পাঞ্জা): ৫ জন
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন): ২ জন
বাদ পড়া গণতন্ত্রী পার্টির কবুতর মার্কার জন্য ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। ইসির যাচাই-বাছাইয়েও তাদের কয়েকজন বাদ পড়েছিলেন। পাল্টাপাল্টি কমিটি নিয়ে ইসি এর আগে শুনানিও করেছে।
ইসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সভাপতি আরশ আলী বলেন, ৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে তাদের বিষয়ে শুনানি হয়েছিল। তারপর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, “বিষয়টি গণমাধ্যম থেকে এখনই জানলাম। কেন এমন হল তা নিয়ে বুধবার আমরা বসব এবং নির্বাচন কমিশনে আপিল করব।”
তবে নিজেদের দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলতে চাননি দুই নেতার কেউ।
৩২ নয়, ভোটে আসা দলের সংখ্যা ২৯টি: ইসি
সভাপতি আরশ আলী ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত বিভক্ত হয়ে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করেন গণতন্ত্রী পার্টির। আরশ আলী তার কমিটির সভাপতি করেছেন দোলন ভৌমিককে। অপরদিকে শাহাদাত হোসেন সভাপতি হয়ে তার কমিটির সাধারণ সম্পাদক করেছেন প্রকৌশলী কামরুল হাসানকে। দুই পক্ষই ইসির কাছে নিজেদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে ইসি তাদের কাউকেই গ্রহণ করেনি।
এদিকে গণতন্ত্রী পার্টির অনুমোদিত কমিটি না থাকায় দলটির নিবন্ধনও শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী দলটির কাছে সময়ে সময়ে কমিটির হালনাগাদ তথ্যসহ বিভিন্ন ধরনের বিষয় জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তারা কোনো ধরনের তথ্য দেয়নি। সে কারণে দলটির নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, “দুই পক্ষের আবেদনই বাতিল হয়েছে। নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালন করেনি গণতন্ত্রী পার্টি। এজন্যে কেন নিবন্ধন বাতিল কর হবে না- এমন নোটিস দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।”