রাতের বেলায় মোবাইল ফোনে ছাত্রলীগের নেতাদের অসংখ্য ‘মেসেজ’ আসে জানিয়ে তা নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রাতে ফোন ‘সাইলেন্ট’ থাকে জানিয়ে তিনি বলেছেন, “সকালে দেখি সারা রাত (মেসেজ), বেশিরভাগ হল ছাত্রলীগের। এখানেও আছে কেউ কেউ, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিভিন্ন জায়গায়। এসব জ্বালাতনগুলো…
“সকালে উঠে আমার মেডিকেশন আছে, আমাকে বাইরে যেতে হয়, তখন আমার প্রস্তুতিটা লাগে। কিন্তু ওই সময় এত মেসেজ পড়তে পড়তে শেষ। সময় ফুরিয়ে যায়। দয়া করে আমাকে মেসেজ দেবেন না।”
ছাত্রলীগের এক সময়ের সভাপতি কাদের সংগঠনটির এখনকার নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “তাদের জন্য আমাদের নেত্রী একটি সুসজ্জিত কার্যালয় তৈরি করে দিয়েছেন। সেটা হল আমাদের ২৩ নম্বরে (বঙ্গবন্ধু এভিনিউ)। তারা এখানে ঘোরে কেন?
“ছাত্রলীগ অফিসে গেলে, ওই অফিসে যাবে। তদবির করলে ওই অফিসে করবে। এখানে তো তাদের আসার কথা না।”
সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির ২২তম সম্মেলন উপলক্ষে প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
কোনো অতি উৎসাহী ভক্ত সুবিধা পাবেন না জানিয়ে আওয়ামী সম্পাদক বলেন, “কারও বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ কিংবা নোয়াখালী হলেও আমার ওইসব প্রীতি নাই। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাই সব নেতা-কর্মীদের একই চোখে দেখি।
“আমার এলাকাবাসী আমাকে নির্বাচিত করে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু কারও প্রতি আমি বিশেষ দৃষ্টি দিতে পারি না, পারব না। আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মী আমার জন্য সমান।”
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কাউকে অতি উৎসাহী ভক্ত ‘সাজতে’ নিষেধ করে তিনি বলেন, “এই দলের নেতা-কর্মীদের মনের খবর আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনার চেয়ে বেশি কেউ জানেন না। তিনি কাউন্সিলরদের মনের খবর ও জীবনের খবর; এমনকি তারা কীভাবে চলছে, কে অসুস্থ, কার আর্থিক সচ্ছলতা নেই, সব খবর রাখেন। তাই এ দলের নেতৃত্ব নির্বাচনে সভাপতি শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।
“একজন কাউন্সিলরও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে আমাদের নেত্রীকে পুনর্বার চাইবেন না। তার জন্য আমরা আজকে এসেছি।”
নিজে কখনোই প্রার্থিতার মধ্যে ছিলেন না দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এখানে আমাদের মধ্য থেকে… আমি এসব প্রার্থিতার মধ্যে কখনও ছিলাম না। তাই আমার অতি উৎসাহী ভক্ত হয়ে নিজেদের বিভেদ সৃষ্টি করবেন না। আমি ভালো আছি, নেত্রী যে দায়িত্ব দেবেন, যেখানে রাখবেন, আমি সেটাই করব।”
আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে সাজসজ্জা ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নিষেধ করেছেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “তার পরও মফস্বলে গিয়ে…হায়রে বিলবোর্ড, যেখানেই যাই বিলবোর্ড। সামনে দেখি একরকম, বিলবোর্ডে দেখি আরেক রকম। চিনিই না। আমার ছবিও আমার চিনতে কষ্ট হয়। কোথা থেকে এলাম? এখানে কী দেখলাম। বিলবোর্ডের ছড়াছড়ি যেভাবে হচ্ছে, এসব আমরা করব না।”
উপ-কমিটির সদস্যদের প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আপনি যদি অন্য কোন শাখার কর্মকর্তার পদে থাকেন, তাহলে উপ-কমিটিতে থাকতে পারবেন না। জেলা, উপজেলা, থানা কমিটির কর্মকর্তা হন, তাহলেও সম্ভব না। কে কোথায় আছেন, সেটা খোঁজ নিলে বের হয়ে আসবে।”
জেলার সহযোগী সংগঠনের কর্মকর্তা উপ-কমিটিতে থাকতে পারবে না বলে জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, “আমাদের অনেক কর্মী বিনা পরিচয়ে, বিনা পদে এখানে ঘুরে বেড়ায়। তাদের আমরা কোনো পদ দিতে পারি না। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ একাধিক পদে রয়েছে।”
প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।