সরকারের সঙ্গে ‘ইতিবাচক বৈঠকে’ কূটনীতিকরা, বিএনপি ‘বন্ধুহীন’: কাদের

“কিছু মানুষ দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে। তাদের অপকর্ম সংশোধন করতে হবে, না হয় নির্বাচনে এটার ফল ভোগ করতে হবে।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2023, 02:20 PM
Updated : 17 Feb 2023, 02:20 PM

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক ‘ইতিবাচক’ ছিল বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার ভাষ্য, বিএনপি এখন বিদেশেও ‘বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে’। 

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ ও নিত্যপণের দাম কমানোর দাবিতে শুক্রবার রাজধানীতে বিএনপির ‘নিরব পদযাত্রা’ কর্মসূচির দিন বিকেলে মোহাম্মদপুরে মকবুল হোসেন কলেজে নগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ‘শান্তি সমাবেশে’ অংশ নেন কাদের। 

আগের দিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিদেশিদের সঙ্গে লবিং করেও (বিএনপি) ব্যর্থ। একের পর এক বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশে এসেছেন এবং সরকারের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। কিন্তু তারা বিএনপির সঙ্গে কোনো বৈঠক করেনি। কূটনীতিকরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইতিবাচক বৈঠক করেছে, আর বিএনপি বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে।” 

বিএনপিকে ‘গণতন্ত্রের বিষফোঁড়া’ হিসেবে বর্ণনা করে কাদের বলেন, “এদের কাছে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, তাদের কাছে দেশ কিংবা জনগণ নিরাপদ নয়। ঘরে বসে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখা আর জানলা দিয়ে পুলিশের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই।” 

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশিদের নানা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রকাশ্যে বিরক্তি প্রকাশের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এই বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগ বেশ ‘উৎফুল্ল’। 

বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সকালে চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “সেখানে নানা বিষয়ের মধ্যে একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। আমরা সেই কথাটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রদূতদের জানিয়েছি।

“এবং অন্যদেরও সেই কথাটি বলা হচ্ছে। আমরাও চাই দেশে আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সমস্ত রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক।” 

বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশিদের এই ‘আগ্রহ’কে ইতিবাচকভাবে দেখার কথাও জানিয়েছেন হাছান। তিনি বলেন, “বিদেশিদের আনাগোনা সবসময় ছিল। বিদেশিদের আনাগোনা বেশি হওয়া ভালো, তারা বাংলাদেশের ওপর ইন্টেরেস্ট ফিল করছে। 

“বাংলাদেশ যেহেতু ইমার্জিং ইকোনমি, বিদেশিরা একটু বেশি আসবে। আমাদের বাণিজ্য বহুমুখী হবে, আমরা আমাদের পণ্য বিক্রি করতে পারব। তাদের আগ্রহ আছে বিধায় আসছে, এটি দেশের জন্য ভালো।”

বিকালের কর্মসূচিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এদেশের গণতন্ত্র ঠিক আছে কিনা সেটা হচ্ছে বর্তমান সরকারের ভাবনা। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার জন্য হাজারো তদবির করে ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপি।” 

‘নির্বাচন ছাড়া বিএনপির উপায় নেই’ 

বিএনপি যদিও বারবার বলছে যে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ভোটে যাবে না, তারপরও ওবায়দুল কাদের মনে করেন, ভোটে আসা ছাড়া বিএনপির হাতে কোনো ‘বিকল্প পথ নেই’। সরকার পতনের দাবিতে বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলোর ‘কোনো প্রভাব দেশে নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “পদযাত্রার নামে যতই অপচেষ্টা করুক না কেন, নির্বাচন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।…গণঅভ্যুত্থান কিংবা গণজাগরণ, বিএনপির আন্দোলনের নদীতে জোয়ার নেই, গণজোয়ার আসে না। বিএনপি স্লো-মোশনে পদযাত্রা করছে, শর্ট মার্চ থেকে লংমার্চে যাচ্ছে, সবই ভুয়া।” 

আওয়ামী লীগকে পালাতে হবে বলে বিএনপির তরফ থেকে আসা বক্তব্যেরও জবাব দেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাবে? পালিয়ে যায় তারেক রহমান। আওয়ামী লীগের শেকড় অন্তরে অন্তরে। আওয়ামী লীগ থাকবে, পালিয়েছেন আপনারা পালাবেনও আপনারা।” 

তারেক রহমান লুটপাট ও সন্ত্রাসের রাজ্য কায়েম করেছিলেন অভিযোগ করে কাদের বলেন, “লুটপাটের রাজা তারেক, হাওয়া ভবনকে খাওয়া ভবন বানিয়েছে। আর এদিকে বর্তমান সরকার বেশি দামে জ্বালানি কিনে ভর্তুকি দিয়ে দেশ চালাচ্ছে।” 

কিছু নেতা-কর্মীর ‘অপকর্ম’ নিয়ে শঙ্কা 

কিছু কিছু মানুষ ‘আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে’ বলেও মন্তব্য করেন কাদের। তিনি বলেন, “তাদের অপকর্ম সংশোধন করতে হবে, না হয় নির্বাচনে এটার ফল ভোগ করতে হবে।” 

দলের সভাপতি কীভাবে জীবনযাপন করেন, সেটাও নেতা-কর্মীদের স্মরণ করান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার পরিবার সাধারণ জীবনযাপন করেন। নিজের ভাগ্য নয়, সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছে শেখ হাসিনার সরকার। 

“শেখ হাসিনার সরকার এদেশের নারীদের সম্মানিত করেছেন। নারীদের কর্মক্ষেত্রে ব্যাপকতা দিয়েছে সরকার। মায়েদেরকে সম্মানিত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।” 

দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, “১৪ বছর আগে ঢাকা কিংবা পুরো বাংলাদেশ কতটা পরিবর্তন হয়েছে, তা দৃশ্যমান। যেদিকে দেখা যায় উন্নয়ন আর উন্নয়ন। বিশ্ব সংকটেও বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার উপর নির্ভর করে। শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নে খুশি, মন খারাপ শুধু বিএনপির। 

“বাংলাদেশ সরকারের আরেকটি সফলতা, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপালের কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। একদিনে ১০০ সেতুর উদ্বোধন কেবল শেখ হাসিনা সরকারের দ্বারাই সম্ভব।” 

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও মোহাম্মদপুরের সংসদ সদস্য সাদেক খানও এই ‘শান্তি সমাবেশে’ বক্তব্য রাখেন।