“এই নির্বাচনে এমন কোনো প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে না যে শেখ হাসিনার বিপক্ষে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে৷”
Published : 06 Jan 2024, 06:29 PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রহসনের’ বর্ণনা করে তা বর্জন করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বামপন্থি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন।
শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধনে এ আহ্বান জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, এবারের নির্বাচনে আসলে সবাই এক পক্ষে। জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ-না ভোটে ‘না’ এর সুযোগ ছিল। কিন্তু এবার তাও নেই।
মানববন্ধনে প্রতীকী ব্যালট বাক্স রাখা হয়। ব্যালটে দলীয়, বিরোধী, স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সবারই প্রতীক নৌকা দেখানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) মেঘমল্লার বসু বলেন, “আমাদের এখন এমন এক অবস্থা তৈরি হয়েছে, যেখানে অস্তিত্ব ধরে রাখাই প্রতিরোধ। একটা আতঙ্ক, একটা চাপা ভয় মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
“আমরা যখন এখানে দাঁড়িয়েছি, তখন ছাত্রলীগের কয়েকজন এসে আমাদের ছবি তুলে নিয়েছে। কেন ছবি তুলেছে? তারা কী সাংবাদিক? না। তারা আমাদের ভয় দেখানোর জন্য ছবি তুলেছে। তারা বলতে চায়, ‘ছবি তুলে রেখেছি। খবর আছে।’ আমরাও বলতে চাই, গত ১৫ বছরের সব হিসাব আমরা রেখেছি৷”
মেঘমল্লার বলেন, “মেজর জিয়াউর রহমান একটা হ্যাঁ-না ভোট করেছে। আওয়ামী লীগ এখনও সেই নির্বাচনের জন্য কথা শোনায়৷ কিন্তু এই নির্বাচনে এমন কোনো প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে না যে শেখ হাসিনার বিপক্ষে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে৷ তখন তো একটি না অপশন ছিল। এখন ‘হ্যাঁ’ ছাড়া কোনো অপশনও নেই।”
মানববন্ধনে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, “আওয়ামী লীগ সারা বিশ্বের কাছে দেখাতে চাচ্ছে এটি একটি ফেয়ার ইলেকশন। পক্ষান্তরে বিরোধী দলীয় মতামতকে চাপা দিচ্ছে। বিরোধী দলকে কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম করতে দিচ্ছে না।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইতিহাস আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস। মুক্তিকামী জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমি বলতে চাই, আপনারা এই প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করুন।”
গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, “স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও বাংলাদেশের কোনো দলীয় সরকার সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেনি। সর্বশেষ ২০০৮ সালে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল। তখন ভোটার ছিল ৮ কোটি, যা বর্তমানে ১২ কোটি। তার মানে নতুন এই ৪ কোটি ভোটার নিজেদের ভোটের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনীত করতে পারেনি।
“আগামীকালের একপাক্ষিক ‘ডামি’ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশবাসী যে কলঙ্কের সাক্ষী হতে যাচ্ছে, তাকে আমরা ‘লাল কার্ড’ দেখাচ্ছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুক্তিকামী মানুষের পক্ষ থেকে আগামীকাল ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করছি, বর্জন করছি, বর্জন করছি।”
ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা আওয়াজ তুলেছে। ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতই আরেকটি নির্বাচন হবে। নাগরিক অধিকার থেকে দিন দিন আমরা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছি । যতক্ষণ পর্যন্ত শেখ হাসিনার পতন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।”
মানববন্ধন শেষে একটি মিছিল রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।