“গণতান্ত্রিক বিশ্বে শেখ হাসিনার অবিচার, অন্যায় ও রক্তপাতের বিষয়গুলো আস্তে আস্তে বের হচ্ছে এবং গোটা পৃথিবীতে এটা নিয়ে ধিক্কার উঠেছে,” বলেন রিজভী।
Published : 23 Apr 2024, 05:51 PM
সরকারের বিরুদ্ধে ‘গুম-খুন ও দমন-পীড়নের’ যে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি, বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে সেই চিত্রই উঠে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, “আমরা বার বার আপনাদের (গণমাধ্যম) কাছে যে কথাগুলো বলে আসছি, এই সরকারের দমন-পীড়ন, নির্মমতা-নির্দয়তা, গুম-খুনের রক্তাক্ত যে আলপনা তিনি এঁকেছেন, দেড় দশক ধরে আমরা সেটা বার বার বলেছি। এটা এখন বস্তাবন্দি করে চেপে রাখার কিছু নেই।
“গণতান্ত্রিক বিশ্বে শেখ হাসিনার এই অবিচার অন্যায় ও রক্তপাতের বিষয়গুলো আস্তে আস্তে বের হচ্ছে এবং গোটা পৃথিবীতে এটা নিয়ে ধিক্কার উঠেছে।”
রাজধানীর নয়া পল্টনে মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন রিজভী।
তিনি বলেন, “রিপোর্টে বাংলাদেশের গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, কারা-নির্যাতনসহ ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বলা হয়েছে।
“রিপোর্টে একটা অবধারিত সত্য কথা উঠে এসেছে। সেটা হচ্ছে, দৃশ্যমান ঘটনা, অবিচার ও নির্মমতা। সেটা আজকে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টের ব্রিফিংয়ে মি. গিলক্রিষ্ট (রবার্ট গিলক্রিস্ট) বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলেছেন। তিনি বলেছেন, এই ‘পলিটিক্যাল প্লয় টু রিমুভ দি লিডার অব দি অপজিশন ফর্ম দি ইলেক্টরাল প্রসেস’। বেগম খালেদা জিয়া যাতে ইলেক্টোরাল প্রোসেসে অংশ করতে না পারেন সে কারণে এই ষড়যন্ত্র।”
সোমবার ‘২০২৩ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাক্টিসেস: বাংলাদেশ’শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
দেশভিত্তিক মানবাধিকার চর্চা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “গত বছর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নির্বিচারে বেআইনি হত্যার ঘটনা, গুম, সরকারের নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অসম্মানজনক আচরণ, কারাগারের কঠিন ও জীবনের জন্য হুমকির পরিবেশ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার-আটক, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় গুরুতর সমস্যা, অন্য দেশে থাকা ব্যক্তিদের ওপর দমন-পীড়িনের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধীদলীয় নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি অভিযোগ দায়েরের জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে ‘ব্যবহার করেছে’ সরকার।
“বছরজুড়ে রাজনৈতিক বিক্ষোভের সময় পুলিশ হাজারো বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যে ফৌজদারি অভিযোগ এনে অনেককে আটক করেছে বলে বিএনপি ও অন্যান্য দল অভিযোগ করেছে, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও তার সমর্থন পাওয়া গেছে।”
রিজভী বলেন, “এক-এগারোতে বেগম খালেদা জিয়ার নামে চারটি মামলা দিয়েছিল আর শেখ হাসিনার নামে ১৫টি মামলা। কিন্তু ক্ষমতার জোর এত বেশি, সেখানে আইন-কানুন আদালত কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় না। শেখ হাসিনার ভয়ে কম্পমান আইন-আদালত-প্রশাসন, উনি যা বলেছেন তাই হয়েছে।
“দেশনেত্রীর নামে মিথ্যা মামলাগুলোকে তারা আইনি প্রক্রিয়ায় সাজা দিয়েছে। আর শেখ হাসিনার নামে যে ১৫টি মামলা সেটা একেবারে তার হুমকির কালবৈশাখীর ঝড়ে সেটা আকাশে কর্পূরের মত মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এই বিষয়গুলো অনেকবার বলেছি… সেটা এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
“জনগণ এটা বিশ্বাস করত, খালেদা জিয়া সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার, খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার বিদ্বেষের শিকার…সেটা এখন গণতান্ত্রিক বিশ্ব, যারা খুব অবজেক্টলি পর্যবেক্ষণ করছেন, তারা সেগুলো তুলে ধরছেন।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক ও আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কাজী সাইয়েদুল ইসলাম বাবুল, মাহবুবুর রহমান সমুন, কাজী রফিক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন-
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র