র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞায় আনন্দিত নই, এটা লজ্জার: ফখরুল

এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে ক্ষমতাসীনরা মিথ্যাচার করছে বলেও বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2023, 11:48 AM
Updated : 18 Jan 2023, 11:48 AM

র‌্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনে বিএনপির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা করছেন, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকারের কার্যক্রমের জন্যই এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে ক্ষমতাসীনরা মিথ্যাচার করছে বলেও তার অভিযোগ।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের র‌্যাব এবং এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

এর পেছনে বিএনপির হাত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তখন সংসদে বলেছিলেন, “র‌্যাবের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে আমাদের প্রতিপক্ষের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান, তারা আমেরিকার সরকারের কাছে কেবল মিথ্যা তথ্য কিংবা অসত্য ঘটনাই প্রকাশ করেনি, সেইসাথে পৃথিবীকে বড় বড় যেসব মানবাধিকার সংস্থা আছে, তাদেরকেও প্রতিনিয়ত ফিডব্যাক করতেছে- যে ‘র‌্যাব খুব খারাপ’ প্রতিষ্ঠান।”

বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ফখরুল বলেন, “আমরা কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা আরোপে খুব আনন্দিত নই। আমরা বারবার বলেছি- এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য লজ্জাজনক, বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক যে একটা প্রতিষ্ঠানের উপরে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।”

Also Read: র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা উঠবে অচিরেই, আশায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Also Read: র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সময়সীমার ইঙ্গিত দেননি লু: যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস

সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা আসা উচিৎ সরকারের উপরে। সরকারের নির্দেশে এই সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটেছে।

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিল কি দিল না, দিস ইজ নট অ্যা ম্যাটার। নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে জনগণ এবং সামনে জনগণ সেই নিষেধাজ্ঞাকে বাস্তবায়িত করবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লুর সাম্প্রতিক সফরে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। তার সঙ্গে বৈঠকের পর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশাবাদ প্রকাশ করেছেন সরকারের মন্ত্রীরা।

তা ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকার মিডিয়াকে ব্যবহার করে, জোর করে একটা কথা বলতে চেয়েছেন জনগণের সামনে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে।

“তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এই নিষেধাজ্ঞা (র‌্যাবের উপর) তুলে নেবেন এবং বাংলাদেশের সরকার তারা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন করতে চায়-এই ধরনের একটা ধারণা তারা (সরকার) জনগণকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু গতকাল (মঙ্গলবার) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, দ্যাটস ইজ এনাফ টু এক্সপ্লেইন দিস; দূতাবাসের সেই স্টেটমেন্টে সেটা ক্লিয়ার হয়ে গেছে।”

ফখরুল বলেন, “কীভাবে মন্ত্রীরা বলেন- নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। একথা তিনি (লু) বলেননি।”

ডনাল্ড লু এর সফর নিয়ে বিএনপির পর্যবেক্ষণ সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “বিদেশের শক্তির উপর নির্ভর করে কখনও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। জনগণের শক্তির উপরেই এখানে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বরাবর।

“এবারও আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে, জনগণ সমস্ত বাধা-বিপত্তি-নির্যাতনকে উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের যে প্রতিবাদ যেটা তারা জানাচ্ছে, সেভাবে তারা সংগঠিত হচ্ছে।

“তবে আমরা যেটা লক্ষ্য করছি, গণতন্ত্রের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের যে কমিটমেন্ট সেই কমিটমেন্ট তারা খুব অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে প্রকাশ করেছেন।”

বিএনপির সঙ্গে ডনাল্ড লুর কোনো সাক্ষাতের কর্মসূচি ছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না আমাদের সঙ্গে তার কোনো প্রোগ্রাম ছিল না। এবার কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা কোনো বৈঠক করেনি।”

আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গেও সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা তো বলেই দিয়েছি যে, আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। এটা খুব পরিষ্কার কথা।

“আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের অধীনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যিনি আছেন তার অধীনে এখানে কখনোই নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ গ্রহণযোগ্য হতে পারবে না।”

মঙ্গলবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির কয়েক সদস্যের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের বিষয়বস্তু জানাতে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন ফখরুল।